যে ঘুষ খাবে সেই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সেও অপরাধী: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথভাবে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। এগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প অনুযায়ী তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ঘুষ খাবে সেই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সেও অপরাধী। রোববার সকালে তেজগাঁও কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যালয়ের (পিএমও) কর্মকর্তাদের লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভালো সেটআপ থাকায় এ কার্যালয় থেকে বিষয়টি নজরদারি করা দরকার। যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারে এবং অর্জনগুলো ধরে রাখা যায়। তিনি বলেন, বন্যার পরই যাতে প্রকল্পগুলো শুরু করা যায় সে লক্ষ্যে পেপার ওয়ার্ক শেষ করে দ্রুত উন্নয়ন কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই বাংলাদেশে বন্যা হবে এবং এ দেশের মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বাংলাদেশে বৃষ্টি ও বন্যা হয়। এটা স্বাভাবিক। তবে এতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি যেন কম হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং বন্যা মোকাবেলায় আমরা যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ পলিবাহিত ব-দ্বীপ হওয়ায় এর মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ভূগর্ভন্থ পানির স্তর রক্ষায় বন্যার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর ক্ষতি আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। যে কোনো পরিকল্পনা মাথায় রাখতে হবে- বন্যা বন্ধ করে নয়, বরং বন্যার সঙ্গে বসবাস করা আমাদের শিখতে হবে।

দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে নিজের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের আরও সক্রিয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি এলাকায় একটু খোঁজ নেয়া দরকার। আমরা সতর্ক করে দিয়েছি কোনো এলাকায় কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ ভিক্ষা করবে না। যেখানেই গৃহহীন থাকবে তাদের একটা ঘর করে দিতে হবে।

এ সময় তার ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘যারা ঘরে ফিরে যেতে চায় তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে আমরা বস্তিবাসীর ওপর সার্ভে করেছিলাম। এ কাজগুলো আবার করতে হবে। ‘শান্তি নিবাস’ এবং ‘অবসর’ কর্মসূচি আবার চালুর কথা তিনি জানান।

বর্তমান সরকার প্রবৃদ্ধি আট দশমিক এক ভাগে উন্নীত করেছে এবং এরপর আরও যত ওপরে ওঠার চেষ্টা করা হবে অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই তা দুরূহ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী কাজের প্রতি সবাইকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এখন অত দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না, অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই এটা হয়ে থাকে। আর এর থেকে যেন পিছিয়ে না যাই সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি দমনে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যে ঘুষ খাবে সেই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সেও অপরাধী। বিষয়টি মাথায় রেখে পদক্ষেপ নিলে এবং বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ হলে অনেক কাজ আমরা দ্রুত করতে পারব। উপার্জন অনুযায়ী কর দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে কত কর দিল আর কে কত খরচ করল সেটারও হিসাব নেয়া দরকার।

দেশে ডেঙ্গু সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আরও সচেতন থাকার এবং এ বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এবার শুধু আমাদের দেশেই নয়, আশপাশের অনেক দেশে ডেঙ্গু দেখা গেছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে, বিশেষ করে ফিলিপাইনে ডেঙ্গু মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পিএমও ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, নিজের ঘরবাড়ি এবং কর্মস্থলের চারপাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নিজেকে সচেতন হতে হবে। যাতে কোথাও পানি জমে এ রোগ সৃষ্টিকারী এডিস মশার লার্ভা জন্মাতে না পারে। এখনও এ রোগের প্রকোপ অনেকটা রয়ে গেছে এবং বিভিন্ন জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের আরেকটু সতর্ক হতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে এটা ঠিক। কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা কাজেই সেই হিসেবে মনে করি দেশের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেখানে প্রটোকলের বাধা আমি কখনও মানি না, মানতেও চাই না। আমি চাই সবার সঙ্গে মিশতে, জানতে ও কাজ করতে। আমরা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করব যাতে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, ড. মসিউর রহমান ও ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পিএমও’র এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

বঙ্গবন্ধুর ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মিলাদ : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রোববার জোহরের নামাজের পর মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জাতির পিতার জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানসহ অন্য কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

মিলাদের পর বঙ্গবন্ধু ও ১৫ আগস্টে হত্যাকাণ্ডের শিকার সবার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামী ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুফতি ওয়ালিউর রহমান খান মোনাজাত পরিচালনা করেন।