যেভাবে ভাঙলো অনশন: ‘একসঙ্গে ৩৪ ভিসির পদত্যাগ দেখার অনেক শখ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের অনশন শেষ পর্যন্ত ভঙ্গ হয়েছে। সাতদিন পর অনশন ভেঙ্গেছে শিক্ষার্থীরা। অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ইয়াসমিন হক আজ বুধবার ভোরে শাবিপ্রবিতে পৌঁছানোর পরপরই শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন এবং তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙ্গতে রাজি হন। এরপর হাসপাতাল থেকে ১১ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অনশন ভাঙ্গা হয়। কিন্তু এই অনশন ভাঙ্গার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

যখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় আন্দোলন থামাতে পারছিলো না এবং অনশন ভাঙ্গানোর ক্ষেত্রে কোনো রকম অগ্রগতি হচ্ছিল না, শিক্ষামন্ত্রীর সাথে বৈঠক করতেও যখন শিক্ষার্থীরা অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক দল এই উদ্যোগ নেয়। জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তারা সেখানকার শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন মহলের সাথে কথা-বার্তা বলতেন। এ রকম কথা-বার্তা বলার পরেই জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে, যদি ড. জাফর ইকবালকে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেক্ষেত্রেই এই সংকটের একটি সমাধান করা সম্ভব হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেত পাওয়ার পর জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আসীম কুমার উকিল এবং সুভাষ সিংহ রায় অধ্যাপক জাফর ইকবালের বাসায় যান গতকাল। সেখানে জাফর ইকবালের সাথে পুরো পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং শেষ পর্যন্ত জাফর ইকবালকে সিলেট যাওয়ার ক্ষেত্রে রাজি করাতে সক্ষম হন। জাফর ইকবাল আজ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন যে, আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা তার বাসায় এসেছিলেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ করলে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪ জন ভিসি একসঙ্গে পদত্যাগ করার যে খবর ছড়িয়েছিল তা নিয়ে এবার তীর্যক মন্তব্য করলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

তিনি বলেছেন, উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ করলে আমাদের দেশের ৩৪ জন ভিসি একসঙ্গে পদত্যাগ করবে বলেছিলেন সেটা চোখে দেখার খুবই শখ ছিল। জানিনা দেখে যেতে পারি কিনা!

আজ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভোরে সস্ত্রীক ক্যাম্পাসে এসে এমন মন্তব্য করেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

ড. জাফর ইকবাল বলেন, আমি এখানে আসতে চাইছিলাম না। কারণ তোমরা আমরা কথা না শুনলে তাই! তবে আমার ছেলে-মেয়েদের উপর আমার বিশ্বাস ছিল, তাই এসেছি। আমি সংকল্প করে এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙিয়ে তারপর আমি সিলেট ছাড়বো। আমি চাই তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও, তবে অনশন ভেঙে আন্দোলন করো। আন্দোলন আর অনশন ভিন্ন জিনিস!

এরপর সকাল ১০টা ২১ মিনিটের দিকে পানি খাইয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী।

জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। সরকারের কাছে আন্দোলনের সঠিক তথ্য নেই। তিনি সরকারের কাছে তাদের প্রকৃত তথ্য তুলে ধরবেন বলেও জানান।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলার ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়। এখানে শিক্ষার্থীরা সবাই বাইরে থেকে শীতে কষ্ট করছে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ কিন্তু তাদের জন্য কোনো মেডিকেল টিম নেই। যারা তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করতো তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। যা খুবই নিন্দনীয় একটি কাজ।

উল্লেখ্য, ড. জাফর ইকবাল সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষক।‎