নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ক্লাসে বসে শুধু কৃষি শিক্ষার পাঠ নিচ্ছে এমনটি নয়। বিদ্যাপীঠের আঙিনায় ফসলও ফলাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আবাদ করছে নানা রকমের তরিতরকারি ও মশলার। ব্যবহারিকের অংশ হিসেব পুরোদস্তুর কৃষকদের মতন করে চাষকাজ করছে তারা। জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ বপন। চারাগাছের পরিচর্যা। আগাছা ও পোকামাকড় দমন। এমন সববিছুই নিজ হাতে করছে যশোর শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসের কয়েক টুকরো জমিতে তৈরি করা হয়েছে কৃষি শিক্ষার এক্সপেরিয়েমেন্টাল প্লট। সেখানে হাতে কলমে কৃষিকাজ শিখছে বিদ্যার্থীরা।
কৃষি শিক্ষার তত্ত্বীয় ক্লাসের পাশাপাশি এখানকার শিক্ষার্থীদের সপ্তাহের দুই দিন এক্সপেরিয়েমেন্টাল প্লটে হাতে কলমে চাষকাজ কাজ শেখানো হয়। উদ্দেশ্য তাত্ত্বিক জ্ঞানের সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা যেন কৃষিকাজ সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে পারে। আর মাঠ পর্যায়ের ব্যবহারিক এই কৃষিকাজের অভিজ্ঞতাও যেন তাদের কিছু মাত্রায় হলেও কৃষি উৎপাদনের সাথে যুক্ত করে। এমনটি হলে শিক্ষার্থীরা গার্হস্থ্য অর্থনীতিতেও কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এরকমটাই বলছিলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ লেফটেনান্ট কর্নেল গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, কৃষি নির্ভর একটি দেশের সন্তান হিসেবে শিক্ষার্থীরা যাতে মাটির ঘ্রানের খুব কাছাকাছি যায়, এমনকি যেন তারা মাঠে ফসল ফলানো মানুষগুলোর কঠিন শ্রমসাধনার জীবনটাকে অল্প করে হলেও অনুধাবন করতে পারে।
সরেজমিন শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়, একাডেমিক ভবনের সামনে নানা রকম ফুল ও সবজির বাগান। বাগানে রঙবেরঙের ফুলের শোভার পাশাপাশি নানা রকম সবজির বাহার। ফুলকপি, পাতাকপি, ব্রোকলি, পালংশাক, ধনে পাতা, সরিষা, বেগুন, টমেটোসহ রকমারি সবজির চাষ হয়েছে। ফুল বাগান ও সবজির ক্ষেতে কাস্তে, নিড়ানি, ছোট্ট ছোট্ট কোদাল নিয়ে কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের কেউ আগাছা সাফ করছে। কেউ ঝাঝরিতে করে পানি দিচ্ছে। কেউবা গাছের গোড়ায় নিড়ানি দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক কৃষিবিদ মুজিবর রহমান জানান, ১১টি প্লটে শিক্ষার্থীরা নিজে হাতে নানা রকমের সবজির পাশাপাশি মশলার আবাদ করেছে। এখান শীতকাল তাই এই মৌসুমের উপযোগী সবজি চাষ করা হয়েছে। যখন যেই ফসল ও সবজির মৌসুম আসে তখন সেগুলোর চাষাবাদ শেখানো হয় শিক্ষার্থীদের। শীতকাল মৌসুম শেষ হলে এইসব প্লটে তাদের ধানের আবাদ শেখানো হবে। গত একবছর ধরে এমনটি চলে আসছে। বর্তমান অধ্যক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কৃষি শিক্ষার তত্ত্বীয় ক্লাসের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে চাষকাজ শেখানোর উদ্যোগটি নিয়েছেন।
তিনি বলেন, অধ্যক্ষ এবার আমাদের ছাদ কৃষির কার্যক্রম শুরুর পরামর্শ দিয়েছেন। যার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ দিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাদে এবার আমরা মাল্টা, কমলা, সফেদা, লেবুসহ নানা ফলফলাদি চাষের উদ্যোগ নিয়েছি।
নবম শ্রেণির ছাত্রী শ্রাবণী আক্তার কেয়া জানায়, ক্লাসে যা পড়ানো হয়েছে, সেগুলোই আবার প্লটে এসে হাতে কলমে শিখেছি। জমি চাষ থেকে শুরু করে চারা রোপন পরিচর্যা সব কিছু। এমনকি আমাদের বিষমুক্ত পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমনও শেখানো হয়েছে। এক্সপেরিয়েমেন্টাল প্লটে আমরা নিজ হাতে পেঁয়াজ, রসুন, মূলা, গাজরের চাষ করেছি।
নবম শ্রেণির ছাত্র অর্ণব দাস জানালো, চাষ পদ্ধতি শেখার সাথে সাথে নিমপাতা ভেজানো পানি ছিটিয়ে কিভাবে পোকামাকড় তাড়াতে হয় সেটিও শিখেছে। রাসায়নিক সারের ব্যববহার ছাড়াই জৈবিক উপায়ে ভালো ফলনের পদ্ধতিও তারা জেনেছে।