মেয়র মতিয়ারের দাফন সম্পন্ন, বাবা মায়ের কবরের পাশেই শায়িত হলেন

রাসেল আহাম্মেদ, দামুড়হুদা প্রতিনিধিঃ দর্শনা পৌর মেয়র দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগেরসভাপতি ও জেলা আ.লীগের সদস্য বিশিষ্ট রাজনৈতিকব্যাক্তিত্ব মোঃ মতিয়ার রহমান দাফন সম্পুর্ণ করা হয়। টানা১মাস ৩ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে দিল্লির এ্যাপোলো হাসপাতালেনিবিড় পরিচর্চাকেন্দ্র গত মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫ টার দিকেচিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

শুক্রবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ১০ টার সময় দর্শনাকলেজ মাঠে জেলার স্মরণকালের মানুষের সমাগমে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১ টার সময় নিজ গ্রামইশ্বরচন্দ্রপুর স্কুল মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে গ্রামের বাবা-মার কবরের পাশেই গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।

দর্শনা পৌরসভার মেয়রের লাশ গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার সময় দিল্লি থেকে কার্গবিমানে করে ঢাকা বিমান বন্দরেরাত ১০ টার পৌছায় এবং নিজ শহর দর্শনার ইসলামবাজারপাড়ার নিজ বাসভবনে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৪ টারদিকে পৌছালে দেখাদেয় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য, দর্শনারআকাশ বাসাত ভারী হয়ে উঠে।

মতিয়ারের মৃত্যুতে জেলার রাজনীতির একটি উজ্জ্বলনক্ষত্রের সমাপ্তি ঘটল। দর্শনা ইশ্বরচন্দ্রপুর গ্রামের কৃতিসন্তান সাবেক দর্শনা ইউনিয়ন পরিষদের চার চার নির্বাচিতচেয়ারম্যান মরহুম শামসুল ইসলামের বড় ছেলে। দর্শনাপৌরসভার মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমানের গ্রামের পারিবারিককবরস্থানে বাবার কবরের পাশেই সমাহিত করা হবে বর্ষীয়ানএ রাজনীতিবিদকে।

দর্শনা পৌরসভার মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান দীর্ঘদিন ধরেলিভারের জটিল রোগে ভুগছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ ওভারতে বহুবার চিকিৎসা নেবার পরও তার শরীরের কোনউন্নতি না হবার কারণে ডাক্তারা তাকে লিভার প্রতিস্থাপনেরপরামর্শ দেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে তার লিভার প্রতিস্থাপনকরার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তার সহধর্মিনী রোজিরহমান নিজের জীবনকে বিপন্ন করে স্বামী মেয়র মতিয়ারকেলিভার দিয়েছিলেন।

দর্শনা পৌর আ,লীগের সভাপতি ও দর্শনা পৌরসভার ১৯৯৯সালে সর্ব প্রথম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, পরবর্তীকালে২০০৫, ২০১৬ ও সর্বশেষ ২০২১ সালে একই পৌরসভারমেয়র নির্বাচিত হন। চার চারবারের সফল মেয়র বিশিষ্টরাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব মোঃ মতিয়ার রহমানের জীবনসংকটাপন্ন অবস্থায় ভালোবাসার নিদর্শন তৈরি করতেনিজের জীবন বিপন্ন করে স্বামীকে লিভার দিয়ে পাশেদাঁড়িয়েছিলেন তার পত্নী মোছাঃ রোজী রহমান(৫৩)। গত ২৫নভেম্বর রাত নয়টারদিকে ভারতের দিল্লির এ্যাপোলোহাসপাতালে তাঁদের লিভার প্রতিস্থাপন করে। সব চেষ্ঠারপরও বাঁচানো গেলো না।

১৯৬৬ সালের ১২ নভেম্বর জেলার দামুড়হুদা উপজেলারদর্শনায় সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মতিয়ার রহমানের জন্ম।তার বাবা মৃত্যু শামসুল ইসলাম বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেরঅন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠসহচর ছিলেন। পারিবারিক জীবনে মতিয়ার রহমান বিবাহিতএবং দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর রোজী রহমান। মতিয়াররহমান দর্শনা কলেজ (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে স্নাতকডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়েসহ অসংখ্য নেতাকর্মী, আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

মতিয়ার রহমান দর্শনাবাসীর উন্নয়নে ভূমিকার কারণে এখনএখানকার মানুষের কাছে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে থাকবে ।এছাড়া তিনি বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, স্কুল, কলেজ ওমাদ্রাসায় আর্থিক সহায়তা দেওয়াসহ সামাজিক ক্ষেত্রেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

পিতার মতো রাজনীতিতে এসে সবার অন্তরে ঠাঁই করে নেনমতিয়ার রহমানও। বাবার হাতধরেই ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুশেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছাত্রলীগের মাধ্যমেতার রাজনৈতিক হাতেখড়ি। এরপর যুবলীগ এবং আওয়ামীলীগে প্রবেশ। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেনআওয়ামী লীগের যোদ্ধা।
ছাত্রজীবন থেকে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে তিনি দক্ষতারপরিচয় দেন। তার কারণে দর্শনা পৌরসভার, দামুড়হুদাউপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপুর্ণ পদে নিয়েআসেন জেলা আ,লীগের নেতৃবৃন্দ।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটেরদর্শনা পৌরসভা সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করে আসছিলেনতিনি। রাজনীতির মাঠে যেমন সুবক্তা তেমনই একজন ন্যায়বিচারক ও ঝানু মেয়র হিসেবে পরিচিত মতিয়ার রহমান।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্র জীবন থেকেইদর্শনা ও জেলার মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনসংগ্রামের প্রথম সারিতেই থাকতেন মতিয়ার রহমান। তাইদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সহ্য করতে হয়েছে শারীরিক ওমানুষিক নির্যাতন।
দেশের অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেনঅগ্র সৈনিক। মতিয়ার রহমান এরশাদবিরোধী আন্দোলনেগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর ৯০-র দশকে এবং২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধীআন্দোলনে তিনি বারবার জেলার রাজপথে পুলিশিনির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াতসরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় নির্যাতনসইতে হয়েছে তাকে। রোষানলের শিকার হয়েছিলেন ১/১১-এর সরকারের সময়েও। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতিরপিতার রাজনীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন সব সময়ই আপসহীন।রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যাশেখ হাসিনার আস্থাভাজন ছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্তমতিয়ার রহমান সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদে বিরুদ্ধে সোচ্চারছিলেন এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে মতিয়ারকেকারাবন্দি হতে হয়েছে। তাকে কারা অভ্যন্তরে সহ্য করতেহয়েছে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন।

দর্শনা পৌরএলাকার অনেকে বলেন, মতিয়ার রহমান দর্শনারউন্নয়নের রূপকার। জেলার সকল মানুষের কাছে দোয়াচাইলেন ছোট ভাই আতিয়ার রহমান হাবু। তার ভাইয়ের জন্যদলীয় নেতাকর্মীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

মরহুম মেয়র মতিয়ারের জানাজায় অংশগ্রহন করেন, চুয়াডাঙ্গা ১ আসনের এমপি সাবেক হুইপ বীরমুক্তিযোদ্ধা ওজেলা আ,লীগের সভাপতি সোলাইমান হক জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা ২ আসনের এমপি হাজী মোঃ আলী আজগার টগর, জেলা আ,লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃআজাদুল ইসলাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদেরচেয়ারম্যান ও দামুড়হুদা উপজেলা আ,লীগের সভাপতিমাহফুজুর রহমান মনজু, সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জেলা আ,লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম টোটনদামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দর্শনা পৌরআ,লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মুনছুর বাবু, দর্শনানাগরিক কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক আরিফসহজেলার চার উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলার সকলরাজনৈতিক ব্যাক্তিসহ সর্বস্তরের মানুষ জানাজায় অংশগ্রহনকরে।

শেষবারের জেলা আ,লীগ,জেলা পরিষদ,উপজেলাপরিষদ, দর্শনা পৌরসভা, দর্শনা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনফুলদিয়ে শ্রদ্ধা জানায় প্রিয় নেতাকে এবং বেলা সাড়ে ১১ টারসময় নিজ গ্রাম দর্শনার ঈশ্বরচন্দ্রপুর স্কুল মাঠে দ্বিতীয়জানাজা শেষে গ্রামের বাবা-মার কবরের পাশেই গ্রামেরকবরস্থানে দাফন করা হয়।