মেহেরপুরে ব্যস্ত সময় পার করছে হাত পাখার কারিগররা


স্বপন আলী, গাংনী প্রতিনিধি
এক সময় গরমে গ্রামাঞ্চলের মানুষের ভরসা হাতপাখার সেই শিল্প এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তবে এখনও মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর মিরপাড়া গ্রামে ঘরে ঘরে চলছে তালপাতা দিয়ে হাতপাখা তৈরির কাজ। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা ও পুঁজি পেলে এ শিল্পের আরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কারিগররা। মেহেরপুর সদর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে বংশপরম্পরায় হাতপাখা তৈরির কাজ চলছে ঘরে ঘরে। গ্রামের লোকজন তালপাখা তৈরি করে ব্যাপক সাফল্য না পেলেও যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার সুখেই চলে। বাড়ির নারীরাও এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পুরুষের পাশাপাশি তারাও আর্থিকভাবে সংসারে ভূমিকা রাখতে পারছেন। তবে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও পুঁজি পেলে এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে জানান কারিগররা। স্বাবলম্বী হতে পারবে গ্রামের অনেক মানুষ।
হাতপাখার কারিগর আনিচুর রহমান (আনিচ) ২৫ বছর ধরে পাখা তৈরি করে আসছেন হাতের তৈরি তালপাখা। ভাগ্যের পরিবর্তনও হয়েছে। গড়ে তুলেছেন দালান। পরিবার নিয়ে সুখেই দিন কাটছে তার। গ্রামের অন্য সব কারিগরের অবস্থায়ও খারাপ নয়। তবে আজ থেকে ২০ বছর আগে এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই এ পেশার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। এখন ৩০-৪০ ঘর মানুষ এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রেখেছেন। যুগের চাহিদা, আর্থিক অনটন ও তালপাতার অভাবে এ শিল্পে কিছুটা ভাটা পড়েছে। শ্যামপুর গ্রামের গৃহিণী শরিফা খাতুন জানান, আমাদের পরিবারের পুরুষরা ঋণ নিয়ে পাখা তৈরি করে থাকেন। সিজনে আমাদের পুঁজির দরকার। পুঁজির অভাবে ব্যবসা করতে পারি না। তবুও ৪-৫ জনের সংসার এ শিল্প থেকেই চলে। কলেজ ছাত্র নাজির আহমেদ বলেন, বাবার পক্ষে একা সংসার চালানো খুব কষ্ট। তাই পাখা তৈরির কাজে বাবাকে সাহায্য করছি। পাখা তৈরির আরেকজন কারিগর মোঃবলেন, একটা পাখা তৈরি করতে ১৭-১৮টাকা খরচ হয়, বিক্রি হয় ২৫-২৭টাকায়। একজন প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০টি পাখা তৈরি করতে পারে। তাতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। পাখা তৈরির কারিগর আতাহার বলেন, আগে আমার বাপ-দাদারা পাখা তৈরি করতেন, পাতা কিনতে হতো না। এখন পাতা কিনতে হয়। তবে শীতের সময় পাতার দাম কম থাকে, তখন পাতা কিনে রাখতে পারলে ভালো লাভ হতো। আমাদের পুঁজির অভাব। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও ভালো হতো।