মেহেরপুরে ঘরে ঘরে কুমড়া বড়ি তৈরির ধুম

মেহেরপুর প্রতিনিধি: মেহেরপুরে জেঁকে বসেছে শীত। শীত আসতেই প্রতিটি পরিবারেই নারীরা তৈরী করছে কুমড়ার বড়ি। গ্রাম অঞ্চলে পতিটি পরিবারের গৃহিনীরা বড়ি তৈরীর কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। চলছে কমড়া বড়ির মহা উৎসব। শীতের মুখরোচক তরকারি হিসেবে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে নারীরা আয় করছেন অনেক টাকা। এ পেশায় নিয়োজিত করে অনেক নারীরাই তাদের সংসার চালাচ্ছেন।

প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাসকলাই ও কুমড়োর বড়ি তৈরিতে নারীদের ব্যস্ততা দেখা মেলে। মাসকলাই ভিজিয়ে রাখার পর সেটি দিয়ে ডালের আটা ও পাকা চাল কুমড়ো মিশিয়ে এ সুস্বাদু বড়ি তৈরি করা হয়। গ্রামীণ এলাকার ৮০ ভাগ মহিলা পালা করে বড়ি দেয়ার কাজটি করছেন। বছর পাঁচেক আগেও শীল পাটায় বেটে বড়ি তৈরীর কাজটি করা হলেও এখন মেশিনের মাধ্যমে কাজটি সেরে ফেলা হচ্ছে। এতে অবশ্য বড়ি দেয়ার কাজটি বেশ সহজ হয়েছে। তবুও স্বাদ ধরে রাখতে পাটায় বেটে বড়ি তৈরীর প্রচলন রয়েছে গ্রামাঞ্চলে।

হোটেল বাজার এলাকার প্রবাসীর স্ত্রী বুলবুলি খাতুন জানান, তার স্বামী বিদেশ থাকেন। স্বামীর মুখরোচক তরকারি কুমড়া বড়ি। সেখানে নিয়োতি কুমড়া বড়ি পাঠাতে হয়। বিদেশীরাও কুমড়া বড়ির তরকারি খেয়ে সুনাম করে। অনেকেই আবার কিনে নিতে টাকা পাঠান। আমি গ্রাম থেকে কিনে বিদেশে পাঠিয়ে দিই।

মেহেরপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার রিংকি ওয়াফি জানান, বড়ি তৈরির আগের দিন ডাল ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর চালকুমড়া ছিলে ভেতরের নরম অংশ ফেলে মিহিকুচি করে রাখতে হবে। তারপর কুমড়ো খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। ধোয়া হলে পরিষ্কার পাতলা কাপড়ে বেঁধে সারা রাত ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পরে ডালের পানি ছেঁকে শিলপাটায় বেটে নিতে হবে। এবার ডালের সঙ্গে কুমড়া মেশাতে হবে। খুব ভালো করে হাত দিয়ে মিশাতে হবে যতক্ষণ না ডাল-কুমড়োর মিশ্রণ হালকা হয়। তারপর কড়া রোদে চাটি বা কাপড় বিছিয়ে বড়ির আকার দিয়ে একটু ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে শুকাতে হবে। বড়ি তিন থেকে চার দিন এভাবে রোদে শুকানোর পর তা অনেকদিন সংরক্ষণ করা যায়।

মনোয়ারা বেগম জানান, শীতের সময় মূলত বড়ি তৈরি করা হয়। এ অ লের নারীরা এই বড়ি তৈরি করতে কয়েক মাস পূর্বে থেকে চাহিদা মতো চাল কুমড়ো পাকানোর ব্যবস্থা করে থাকেন। এরপর মাসকলাই দিয়ে তৈরি করা হয় এই সুস্বাদু খাবারের অংশ বিশেষ কুমড়ো বড়ি। কুমড়ো বড়ি তৈরিতে মূলত চালকুমড়া এবং মাষকলাইয়ের ডাল প্রয়োজন। মাষকলাইয়ের ডাল ছাড়াও অন্য ডালেও তৈরি হয় এ বড়ি। কুমড়োর বড়ি তৈরিতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। রাত জেগে শীলপাটায় কেজি কেজি ডাল বাটা সহজ কাজ নয়। রোদে মচমচে করে শুকালেই এর ভালো স্বাদ পাওয়া যায়। নিজেরা খাওয়াসহ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও পাঠানো হয়। তবুও মুখরোচক খাবার আর আত্মীয়তার জন্য এটি করতে হয়। এখানেও একটা বাড়তি আনন্দ রয়েছে।

হোটেল বাজারের ব্যবসায়ি বাবু জানান, মুদি ব্যবসায় পাশাপাশি শীত এলেই কুমড়োর বড়ি বিক্রি করেন তিনি। অনেকেই চাল কুমড়োর আবাদ করেন শীতকালে বড়ি তৈরীর জন্য। গেল বছর একডজন বড়ি ৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এবার দাম বেড়ে হয়েছে ৭৫ টাকা। বড়ি তৈরীর উপকরণ ও শ্রমমূল্য বৃদ্ধির কারণে বড়ির দামও বেড়ে গেছে।

মেহেরপুর জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) নাসিমা খাতুন জানান, নারীরা বিভিন্ন পেশায় সংসার চালাচ্ছে। আয় করছে মোটা অংকের টাকা। বিশেষ করে শীত আসলেই মেহেরপুরের প্রতিটি বাড়িতে কুমড়া বড়ি তৈরীর উৎসব চলছে। এক সময় পরিবারের প্রয়োজনে কুমড়া বড়ি তৈরী করা হলেও এখন বানিজ্যিক হয়ে পড়েছে কুমড়া বড়ি। জেলায় বেশ কয়েক হাজার পরিবার সারা বছর কুমড়া বড়ি তৈরী করে সংসার চালাচ্ছে। তিনি আরও জানান, এখন নারীরা অনলাইনের মাধ্যমে শহরে এই কুমড়া বড়ি অর্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে সাবলম্বী হচ্ছেন।