মেহেরপুরে ওএমএস এখন অমানবিক

খান মাহমুদ আল রাফি, মেহেরপুর: খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলার জন্য দরিদ্র জনগোষ্টির মধ্যে স্বল্পমুল্যে চাল ও আটা সরবরাহ করতে সারাদেশের ন্যায় মেহেরপুরে খোলা বাজারে খাদ্যশষ্য বিক্রয় কার্যক্রম (ওএমএস) শুরু করলেও এর সুফল পাচ্ছেনা দরিদ্র জনগোষ্টি। সরকারীভাবে কম দামে চাল ও আটা দরিদ্রদের মাঝে বিক্রির জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেই খাদ্যশষ্য বিক্রয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম এবং হয়রানির বিস্তর অভিযোগ।

১০/১১ ঘন্টা অপেক্ষার পরও ৫ কেজি চাল এবং ৫ কেজি আটা মিলছে না লাইনে দাড়িয়ে থাকা নিম্নবিত্ত মানুষদের কপালে। সরকার ওএমএস কর্মসুচির মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে ৫ কেজি আটা বিক্রি শুরু করলেও বাস্তবে এই উদ্যোগের সুফল মিলছে না। মেহেরপুর পৌর এলাকায় ৯ জন সহ জেলায় মোট ১৪ জন ওএমএস ডিলার রয়েছে। শহরে নিন্মমূল্যে প্রতিদিন ৫ টন চাল এবং ৫ টন আটা ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রির জন্য বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু সরকারী এই খাদ্যশষ্য বিক্রিতে ডিলারদের অনিয়ম এবং দুনীতির কারণে সব দরিদ্র মানুষের কপালে জোটেনা এই খাদ্যশষ্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, শীতের এই রাতে মেহেরপুর শহরের সবাই যখন গভির ঘুমে, তখন একটু সস্তায় চাল আর আটা কেনার আশায় ওএমএস ডিলারদের দোকানের সামনে ভিড় করেছে দরিদ্র নারী-পুরুষ। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় রাত ১২টার পর তারা ডিলারের দোকানের সামনে ব্যাগ চাপা দিয়ে সিরিয়াল রেখে যায়, রাত তিনটায় সশরীরে এসে লাইনে দাড়ায়, সকাল ৯টা পর্যন্ত এভাবেই নিদ্রাহীন প্রহর কাটে হতদরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত জনতার। শীতে জড়োসড়ো হয়ে ১০/১১ ঘন্টা অপেক্ষার পর কেউ চাল-আটা পায়, আবার কেউ পায়না। কিন্তু সকাল হলে লাইনের কিছু মানুষকে খাদ্যশষ্য দিয়ে বলা হচ্ছে বরাদ্দ শেষ।

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ডিলাররা ৫ কেজি না দিয়ে ৩ কেজি দিচ্ছে। অনেক সময় ওজনেও কম দিচ্ছে। এভাবে ডিলাররা খাদ্যশষ্য দরিদ্রদের না দিয়ে অধিক মুনাফা করতে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করছে। সরকারী এই কার্যক্রম তদারকির জন্য ট্যাগ অফিসার নিয়োগ থাকলেও নেই কোন তদারকি। কথা বলতে গেলে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা লজ্জা পেয়ে সরে যান।

১১ ঘন্টা অপেক্ষার পর ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা পাওয়া রিক্সা চালক মনি মিয়া বলেন, ‘আগামী ৩ দিন লাইনে দাড়ালেও আমাকে আর চাল ও আটা দেবে না। সারাদিন রিক্সা চালানোর পর এই শীতের রাতে অনেক কষ্ট হলেও থাকতে হয়, আর রাতে না থাকলে সকালে চাল ও আটা পাওয়া যাবেনা, পরিবার নিয়ে অনাহারে থাকতে হবে।

দিনমজুর শহিদুল বলেন, আমরা গরীব মানুষ। লাইনে দাড়িয়ে ঠিক মত না পেলেও ডিলারের সাথে যোগসাজস করে লাইনে না দাড়িয়েও অনেকে চাল-আটা নিয়ে যায়। রহিমা বেগম বলেন, রাতভর ব্যাগ হাতে করে দাড়িয়ে থেকে কোন দিন ৫ কেজি চাল ও ৩ কেজি আটা আবার কোনদিন শুধুই চাল পায়, আবার তিন দিন পর লাইনে দাড়াতে পারি। তিনি বেশি করে চাল-আটা ও ওয়ার্ড ভিত্তক কার্ডের দাবি কারেন।

কয়েকজন ডিলারের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, বরাদ্দ অনুয়ায়ী সবার মাঝে চাল ও আটা দেওয়া হয়। বর্তমানে বরাদ্দ কম থাকাতে অনেককেই ফিরে যেতে হয়। তবে চাল কম দেওয়া হয় না। যেহেতু বরাদ্দ কম তাই সকলকে দেওয়ার জন্য অনেক সময় আটা তিন কেজি করে দেওয়া হয়। ডিলার শামীম জাহাঙ্গীর সেন্টু বলেন- অনেক সম্মানী মানুষও ওএমএস এর চাল আটা নিতে আসে। তখন তাদের দিতে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানো কেউ বঞ্চিত হয়। আবার অতিরিক্ত মানুষ হলে পরিমান কম দিয়ে সকলে যেন পায় সেটা চেষ্টা করা হয়।

মেহেরপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, শহরে সুষ্ঠভাবে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। জনপ্রতি ৫ কেজি চাল ও ৫ কেজি আটা দেওয়া হয়। আটার চাহিদা বেশি হওয়ার কারনে বেশি মানুষকে দিতে অনেক সময় ৩ কেজি করে দেওয়া হতে পারে। দূর্নীতির বিষয়ে বলেন, তরারকি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া আছে, তারা তদারকি করেন। কোন অভিযোগ নেই। তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পেলে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে।