মেহেরপুরের গাংনীতে মসজিদের টাকা সাব-রেজিস্ট্রারের পকেটে!

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর)

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে জমি রেজিস্ট্রির শেষ ধাপে মসজিদের জন্য এক শত টাকা করে আদায় করা হয়। মসজিদের নামে টাকা আদায় করা হলেও রশিদ দেওয়া হয়না দাতাদের। চলতি বছরে মসজিদের নামে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা আদায় করা হলেও মসজিদ কর্তৃপক্ষ টাকা পেয়েছেন মাত্র ১৫ হাজার। সেবা গ্রহিতারা টাকা দেওয়ার কথা জানালেও, মসজিদের নামে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেন সাব-রেজিস্ট্রার।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্র অফিসে জমি রেজিস্ট্রি করতে আসে ক্রেতা-বিক্রেতা। এই জমি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করার শেষ ধাপে দলিলে আঙ্গুলের ছাপ দিতে হয়। আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার আগেই বলা হয় এক শত টাকা দেন। কিসের টাকা জানতে চাইলে বলা হয় মসজিদের টাকা। সাধারণ মানুষ টাকা দিলেও মসজিদ কর্তৃপক্ষ সেই টাকার শিকেভাগও পায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, গাংনী উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের হিসাব অনুযায়ী জানুয়ারী-২০২১ হতে অক্টোবর-২০২১ পর্যন্ত মোট দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে ৭ হাজার ৪ শত ৩৭ টি। রেজিস্ট্রিকৃত জমির দলিলে আঙ্গুলের ছাপ দিতে দলিল প্রতি এক শত টাকা নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী জানুয়ারী-২০২১ হতে অক্টোবর-২০২১ পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৭ শত টাকা মসজিদ ফান্ডে জমা হওয়ার কথা থাকলেও। জানুয়ারী হতে অক্টোবর পর্যন্ত মসজিদ ফান্ডে জমা হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা।

জমি রেজিস্ট্রি করতে আসা বিক্রেতা এ উপজেলার বামুন্দি গ্রামের শাহা আলম বলেন, টিপ-ছাপ দেওয়ার আগেই টাকা দেওয়ার বিষয়টি জানিয়ে বলেন, উপজেলা মসজিদের জন্য এক শত টাকা চাইলো তাই এক শত টাকা দিয়েছি। একই কথা জানালেন দেবীপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম, এছাড়াও ইতোপূর্বে জমি রেজিস্ট্র করা চরগোয়াল গ্রামের শাহিনুর ইসলাম, এবং তোফাজ্জেল হোসেন বলেন টিপ-ছাপ দেওয়ার আগে টাকা না দিলে সে দলিলে কোন ভাবেই টিপ-ছাপ দিতে দেওয়া হয়না। টাকা না দিয়ে কোন ভাবেই আসার সুযোগ নেই।

উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ফান্ডে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কত টাকা দিয়েছে জানতে চাইলে ঈমাম ইলিয়াস হোসেন জানান, জানুয়ারী-২১ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ হাজার টাকা পেয়েছি সাব-রেজিস্ট্র অফিস থেকে। ইতোপুর্বে মসজিদের রশিদে টাকা নেওয়া হতো এই সাব-রেজিস্ট্রার আসার পর রশিদ ফিরিয়ে দিয়েছে তাই আমরাও আর গুরুত্ব দেই না।

টাকা নিলেও মসজিদের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে সাব-রেজিস্টার মাহফুজ রানা বলেন, এখানে মসজিদের নামে কোন টাকা নেওয়া হয়না। আগে মসজিদের রশিদে টাকা নেওয়া হতো। আমি আসার পর থেকে মসজিদের নামে কোন টাকা নেওয়া হয়না। তবে এক শত টাকা নেওয়া হয় সুইপার ও অফিসের আয়ার বেতন এবং টয়লেট পরিস্কারের সরঞ্জাম(হারপিক, সাবান) কেনার জন্যই । সবাই টাকা দেয়না, ৩০% মানুষ টাকা দেয়।

জেলা রেজিস্টার সাইফুল ইসলাম বলেন, মসজিদের নামে টাকা তুলে নিজের খরচ চালাচ্ছে এরকম অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।