মুক্তাগাছায় ৭৫ বছর ব’য়সে বাবা হওয়া, মেনে নিতে পারছেন না ভাতিজারা

এমদাদুল হক, ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ ময়মনসিংহ জেলার, মুক্তাগাছা উপজেলায় তারাটি ইউনিয়নের কলাদিয়া গ্রামের হাবিবুর রহমান তোতা মিয়া।স্ব -উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার প্রত্যয়ে কৈশোর থেকে সঞ্চিত অর্থে জমি কেনা শুরু করেন। ক’ঠোর পরিশ্রমে আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত।সব কিছু গুছিয়ে সেই সময়ে পৌঁছতে সময় লেগেছে ৭৫ বছর।এমনি এক ব্যক্তি।
তিনি জীবনের সবটুকু সময় ব্যয় করেছেন সম্পদ অর্জনে।কিনেছেন একরে একরে জমি।একাধিক বাসা-বাড়ি। শুধু যে সম্পদ কিনেছেন তা নয় এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কথা চিন্তা করে গড়ে তুলেছেন ম’সজিদ-মাদরাসা’সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ই’চ্ছা রয়েছে কলেজ, হাসপাতাল ও বৃ’দ্ধাশ্রম গড়ে তোলার।এসব করতে করতে জীবন থেকে কখন যে ৭৪টি বসন্ত পেরিয়ে গেছে টেরও পাননি তিনি।

বর্তমানে তোতা মিয়ার সময় কাটে স্ত্রী’ স’ন্তানকে নিয়েই।হাবিবুর রহমান তোতা মিয়া। ছয় ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট। ১০ বছর ব’য়সে বাবা মা’রা যান। মাকে হা’রান দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়।নানা টানাপোড়নে দেয়া হয়নি মেট্রিক পরীক্ষা।জড়িয়ে পড়েন কৃষিকাজে। কৃষির আয়ের টাকায় একে একে ক্রয় করেন ৩০ একর সম্পত্তি। তখন থেকে ভাবতেন সম্পদের পাশাপাশি এলাকার মানুষের কল্যাণে কিছু করার।সেই চিন্তা থেকে নিজ এলাকায় গড়ে তোলেন একটি প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, ম’হিলা মাদরাসা, ম’সজিদ, গোরস্থান এবং ঈদগা মাঠ।গড়ে তুলবেন কলেজ ও বৃ’দ্ধাশ্রম। এসব প্রতিষ্ঠানে দান করেছেন প্রায় ৭ একর জমি।এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে তার জীবন থেকে চলে গেছে অনেকগুলো বছর।৭৪ বছর ব’য়সে ২০১৮ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন একই উপজে’লার কুমা’রগাতা ইউনিয়নের মনতলা গ্রামের মুখলেছুর রহমানের ২২ বছর ব’য়সী আকলিমা খাতুনের স’ঙ্গে।বছর ঘুরতেই তাদের ঘর উজ্জ্বল করে জ’ন্ম নেয় এক পুত্রস’ন্তান। স’ন্তানের নাম রাখেন মোহাম্ম’দ আল রহমত ইয়াহিয়া।হাবিবুর রহমান তোতা মিয়া বলেন, বাবা-মা মা’রা যাওয়ার পর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।একেবারে অসচ্ছল পরিবারের ছে’লে ছিলাম না। তারপরও মনে ই’চ্ছা ছিল নিজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। ’৫৮-’৫৯ সালের কথা।সেই সময় থেকে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া চার একর জমিতে শুরু করি হালচাষ। তখন সবচেয়ে বড় কৃষি ছিল কলাবাগান আর পানের বরজ।পাশাপাশি ধান, পাট আর আলু ছিল মৌসুমি ফসল। জীবনে বাজে কাজে বা বাজে নে’শায় একটি পয়সাও খরচ করিনি। কৃষি থেকে যা আয় হতো সেই আয়ের টাকায় প্রতি বছর কিছু কিছু করে জমি কিনেছি।এভাবে ক’ঠোর পরিশ্রম করে আজ ৩০ একর সম্পত্তিরর মালিক হয়েছি। তাছাড়া মুক্তাগাছা উপজে’লা সদরে রয়েছে আরও দুটি বাড়ি।জমি কেনার পাশাপাশি আরেকটি স্বপ্ন দেখতাম এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার। কারণ এই এলাকাটি ছিল অবহেলিত। ময়মনসিংহ সদর আর মুক্তাগাছা উপজে’লার শেষ প্রান্ত। এরপরই জামালপুর জে’লা।আশপাশে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ম’সজিদ মাদরাসা ছিল না।১৯৯০ সালে গ্রামের কয়েকজনের পরাম’র্শে নিজ নামে একটি বেস’রকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয় করি (যা পরে স’রকারি হয়)।পরে একে একে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা, ম’হিলা মাদরাসা, ম’সজিদ, গোরস্থান ও ঈদগা মাঠ করি। এছাড়াও কলেজ ও বৃ’দ্ধাশ্রম করার জন্য জমিও দিয়ে রেখেছি।উদ্যোক্তার অভাবে কলেজ ও বৃ’দ্ধাশ্রমের কাজ শুরু করতে পারছি না।তোতা মিয়া আবেগাপ্লুত কণ্ঠে জাগো নিউজকে বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় ময়মনসিংহে বঙ্গবন্ধুর স’ঙ্গে হাত মিলিয়েছিলাম। তখন থেকেই আমি উনার ভক্ত।শিশু
এমনিতেও পরিবারের সবাই আওয়ামী রাজনীতির স’ঙ্গে জ’ড়িত। বৃ’দ্ধাশ্রমটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে করতে চাই।এছাড়া একটি হাসপাতাল ও এতিমখানা করার ই’চ্ছা রয়েছে তার। হায়াতে দিলে তিনি এগুলো করে যেতে চান।জীবনের শেষ মুহূর্তে এসে বিয়ে করলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে হাস্যোজ্জ্বল তোতা মিয়া বলেন, ছাত্র অবস্থায় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম জীবনে প্রতিষ্ঠিতহয়ে বিয়ে করবো না। যুবক ব’য়সে অনেক জায়গা থেকে বিয়ের ঘর এসেছে কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞা ন’ষ্ট করিনি। শেষ ব’য়সে এসে বুঝলাম বাকি জীবনটা পার করতে একজন স’ঙ্গীর প্রয়োজন। সেই চাওয়া থেকে ২০১৮ সালে বিয়ের পিঁড়িতে বসি।পাত্রী একই উপজে’লার কুমা’রগাতা ইউনিয়নের মনতলা গ্রামের মুখলেছুর রহমানের।বিয়ের সব কিছুই ঠিক করেছেন ভাতিজা ছফির উদ্দিন ভেন্ডার।বিয়েতে উকিল বাবাও হয়েছেন ভাতিজা ছফির উদ্দিন। গত জুলাইয়ে আমাদের সংসারে জ’ন্ম নেয় এক পুত্রস’ন্তান। নিজেই নাম রাখি মোহাম্ম’দ আল রহমত ইয়াহিয়া। এখন সময় কাটে স্ত্রী’ স’ন্তানকে নিয়েই। ছে’লে বড় হয়ে একজন মা’ওলানা হবে এমনটাই প্রত্যাশা আমা’র।তোতা মিয়ার ভাতিজা ছফির উদ্দিন বলেন
চাচাকে আমি দেখে শুনে একটি দরিদ্র পরিবারে বিয়ে দিয়েছি। দরিদ্র পরিবার ছাড়া কেউ এমন ৭৪ বছর ব’য়সের ঘরে মে’য়ে দিতে চায়নি। চাচার বিয়ে দেয়ার কারণে ভাই ভাতিজা সবাই আমা’র প্রতি ক্ষু’ব্ধ।কারণ বিয়ের পর তাদের ঘরে এক ছে’লেস’ন্তানের জ’ন্ম হয়েছে। এই বিয়ে না হলে স’ন্তান না হলেসব সহায় সম্পত্তি ভাতিজারা ভোগ দ’খল করতো।এখন তো তোতা মিয়ার উত্তরাধিকারী হয়েছে।কলাদিয়া হাবিবুর রহমান স’রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, এদেশে অনেক টাকা-পয়সা ওয়ালা মানুষ আছে।কিন্তু মানুষের কল্যাণে ক’জন এগিয়ে আসে। হাবিবুর রহমানের মতো যদি সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়তে উদ্যোগী হতো তাহলে দেশটা সত্যিই সোনার দেশে পরিণত হতো।