মুকসুদপুরে স্কুলে না গিয়েই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন নেয়ার অভিযোগ এক সহকারী শিক্ষক নেতার বিরুদ্ধে

কাজী ওহিদ,গোপালগঞ্জঃ স্কুলে না গিয়ে ক্ষমতা দেখিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতা। এছাড়া তিনি স্কুলে আসলেও কোন ক্লাস করান না। ক্লাস চলাকালীন সময় পড়ে থাকেন মোবাইল ফোন নিয়ে। ইচ্ছে হলেই প্রায় চলে যান স্কুল থেকে। এছাড়াও তিনি স্থানীয় প্রভাবের কারণে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক অনেকটাই নিরুপায়। এমন সব অভিযোগ উঠেছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার দিগনগর ইউনিয়নের ১০২নং বর্ণী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষক নেতা মোঃ আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

অভিযোগে জানা যায়,২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল ওই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন আসাদুজ্জামান। এর কিছুদিন পর তিনি শুরু করেন শিক্ষক রাজনীতি। যোগ দেন বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ নামের একটি সংগঠনে। বর্তমানে তিনি ওই সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সাল থেকে সংগঠনের নানা কাজের অজুহাত দেখিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময়ই রাজধানী ঢাকাতে থাকতেন তিনি।মাসে একবার এসে জোর করেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতেন তিনি। একাধিক অভিযোগের পর বেতন বন্ধ হয়ে যায় আসাদুজ্জামানের। প্রভাব খাঁটিয়ে আবার ফিরে আসেন পূর্বের অবস্থানেই। ২০১৬ সালে বিএড করার জন্য চলে যান ঢাকায়। বিএড শেষ করে আসলেও তার কোন পরিবর্তন হয়নি। এভাবে চলেছে আরো দুই বছর। নতুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ঘটনাটি জানতে পেরে আসাদুজ্জামানকে আর ছুটি না দেয়ার মৌখিক নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষককে। তাতেও কাজ হয়নি খুব একটা। হাজিরা খাতায় দেখা যায় গত ২২ আগষ্ট থেকে পর পর ৪ দিন অনুপস্থিত থাকেন তিনি। এরপর দুই দিন স্কুলে আসার পর ১৩ দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন আসাদুজ্জামান। সেপ্টেম্বর মাসেও প্রায় একই অবস্থা। অক্টোবর থেকে উর্ধতন কর্মকর্তাদের চাপে স্কুলে আসলেও কোন ক্লাসই করান না তিনি।  নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, আসাদুজ্জামান স্যার স্কুলে আসে না। স্কুলে আসলেও আমাদের ক্লাস নেন না। হয় তিনি মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত, না হয় ঘুমিয়ে থাকেন।

স্থানীয় তোতা  মিয়া ও ওসমান সহ অনেকেই বলেন, আসাদুজ্জামান শিক্ষক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। তিনি এত অনিয়ম করায় আমাদের সন্তানরা পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়ছে, রেজাল্টও খারাপ করছে।  স্কুলের প্রধান শিক্ষক শংকর প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, আমি আসাদুজ্জামানের কাছে নিরুপায়। উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিক ও লিখিতভাবে জানিয়েও খুব একটা ফলাফল হয়নি। বর্তমানে নতুন ডিপিইও স্যার এসে চাপ সৃষ্টি করলে আসাদুজ্জামান স্কুলে আসলেও ক্লাস করান না। তিনি আরো বলেন, এ স্কুলে ২৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৫জন শিক্ষকের স্থলে বর্তমানে আমিসহ ৩ জন শিক্ষক রয়েছি। এর মধ্যে একজন বিপিএড ট্রেনিংয়ে আছে। তাই একজনকে ডেপুটিশনে এখানে আনা হয়েছে। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে দুইজন শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। শিক্ষক স্বল্পতার সত্ত্বেও আসাদুজ্জামানের অনুপস্থিতির কারণে স্কুলের পড়া লেখার চরম ক্ষতি হচ্ছে। দিন দিন স্কুলের রেজাল্টও খারাপ হচ্ছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত হোসেন ওই সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জানের স্বেচ্ছাচারিতার কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন, স্বেচ্ছাচারিতা থেকে স্কুলকে বাঁচাতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি। অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ আসাদুজ্জামান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা। আমি শিক্ষক নেতা হওয়ার কারনে অনেকেই আমাকে ইর্ষা করে এ মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। মুকসুদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন,অনিয়মের কারনে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে । বর্তমানে তার বেতন বন্ধ আছে ।