মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরির পরও ১৪৯ রানে হার

ক্রীড়া প্রতিবেদক : বিশ্বকাপে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরিতে বিব্রতকর রেকর্ড থেকে বাঁচালেন বাংলাদেশকে। এই সাধারণ উদ্‌যাপনে দিলেন অনেক সমালোচনার জবাব। কাগিসো রাবাদার শর্ট বলটাকে ফাইন লেগে ঠেলে দিয়েই শূন্য ভাসালেন শরীরটাকে, ছুড়লেন হাত। খুব সাধারণ এক উদ্‌যাপন।

আজ দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তিন সেঞ্চুরি ছিল মাহমুদউল্লাহর। তিনটিই আইসিসির আসরে। সবশেষটি ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

আগের দুটি ২০১৫ বিশ্বকাপে পরপর। ছয় বছর পর এলো চতুর্থ সেঞ্চুরি, এবারও বিশ্বকাপে। তাঁর ১১১ রানের ক্যারিয়ার সেরা নিঃসঙ্গ লড়াইয়ের পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৪৯ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।

আগের ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ২২৯ রানের উড়িয়ে দিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একটা সময় পর্যন্ত মনে হচ্ছিল আজ বাংলাদেশের হারের ব্যবধানটা এর চেয়েও বড় হবে। সেটি হয়নি। একাই শুধু লড়লেন মাহমুদউল্লাহ।

মাহমুদউল্লাহ ১২২ রানে ৭ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন ২৩৩ রান পর্যন্ত। দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ৩৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় সম্মানজনক অবস্থানে এনে দিয়ে তবেই ফিরেছেন সাজঘরে।

এর আগে প্রথম ইনিংসে টস জিতে কুইন্টন ডি ককের ১৭৪ রানের ইনিংস রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। হেনরিখ ক্লাসেনের ৪৯ বলে ৯০ ও এইডেন মার্করামের ৬০ রানের ঝড়ে প্রথম ইনিংসেই উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ।

বোলারদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্যাটাররাও সমান তালে ব্যর্থ। মাহমুদউল্লাহর ইনিংসটি না হলে হয়তো ডি ককের রানটাও ছোঁয়া হতো না বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচের চারটিতেই হারা বাংলাদেশের।

বাংলাদেশ এক ম্যাচ ছাড়া বাকি ম্যাচগুলোতে টপ অর্ডারের হতশ্রী ধারাবাহিক ব্যাটিং আজকেও অব্যাহত রইল। মার্কো ইয়েনসেনের পরপর দুই বলে তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত ফেরার পরই বোঝা গেল, ম্যাচে বাংলাদেশের পরিণতি কী হতে যাচ্ছে!

সপ্তম ওভারের প্রথম বলে ইয়েনসেনের বাউন্স অহেতুক তাড়া করতে গিয়ে ডি কককে ক্যাচ দিলেন ১২ রান করা তানজিদ। পরের বলে লেগ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে ডি কককে ক্যাচ দিয়ে গোল্ডেন ডাক শান্তর। বাংলাদেশি প্রথম ব্যাটার হিসেবে দুইবার গোল্ডেন ডাকের বিব্রতকর এক রেকর্ড গড়লেন তিনি!

শুরুর বিপর্যয়ের পর সাকিব আল হাসানও উইকেটে এসে তাড়াহুড়ো দেখালেন। চার বল খেলে মাত্র ১ রান করে লিজাড উইলিয়ামসের বলে দুর্দান্ত ক্যাচ হলেন হেনরিখ ক্লাসেনের।

১২ তম ওভারে ৮ রান করা মুশিফকুর রহিমকে ফেরালেন জেরাল্ড কোয়েৎজে, ১৫ তম ওভারে ইয়েনসেনের বলে এলবিডব্লিউ ২২ রান করা লিটন। ৩৮৩ রানের জবাবে ৫৮ রানে ৫ উইকেট নেই বাংলাদেশের। হাতছানি ওয়ানডে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় হারের লজ্জার রেকর্ড।

মাহমুদউল্লাহ ও মেহেদী মিরাজের ষষ্ঠ উইকেটের জুটি থেকে রান এলো ২৩। কেশব মহারাজের বলে দ্বাদশ খেলোয়াড় আন্দিলে ফেলুকয়ওকে ক্যাচ দিয়ে মিরাজ (১১) যখন ফিরলেন তখন বিশ্বকাপের রেকর্ড ২৭৫ রানের হার থেকে ২৭ রান দূরে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে এই ব্যবধানে হেরেছিল আফগানিস্তান।

বাংলাদেশকে যে আফগানিস্তানের রেকর্ডে ভাগ বসাতে হয়নি সে জন্য কৃতিত্বটা নিতে পারেন নাসুম আহমেদ। ১৯ বলে ১৯ রান করে ফেরার আগে দলকে লজ্জা থেকে বাঁচিয়ে গেছেন তিনি।

১২২ রানে সপ্তম উইকেট হারানোর পর দক্ষিণ আফ্রিকার অপেক্ষাটাকে বড় করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৬৭ বলে ৫০ করে বাংলাদেশের হারের ব্যবধানটাই শুধু কমিয়েছেন এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার। ১০ মাস পর প্রথম ফিফটিকে নিয়ে গেলেন সেঞ্চুরি পর্যন্ত।

১০৪ বলে পেলেন অনেক অপেক্ষার সেঞ্চুরি। থামলেন ১১১ বলে ঠিক ১১১ রান করেই। ১১ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কা মাহমুদউল্লাহর ইনিংসে। নবম উইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে যোগ করলেন ৬৮ রান। বড় হারের দিনও মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিটি এনে দিয়েছে বাংলাদেশের সাজঘরে ভীষণরকম স্বস্তিও!