মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আউটসোর্সিং শ্রমিকদের বেতনে নয়-ছয়

এস কে সুমন মাহমুদ,মানিকগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি-

মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ প্রাপ্তদের বেতনের টাকা নয়-ছয় করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গালফ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড। বিগত বছরের ন্যায় চলিত বছরেও শ্রমিকদের বেতন নিয়ে নানা তালবাহানা করে আসছে এই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে হাসপাতালের শ্রমিকরা মানববন্ধন করলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচার হয়।

চলিত অর্থবছরে শ্রমিকদের পাঁচমাস বেতন বন্ধ থাকার পর গত ৩০ নভেম্বরে ব্যাংক এশিয়া এজেন্ট ব্যাংকিং বাংলাদেশ হাট, গড়পাড়া মানিকগঞ্জ শাখার মাধ্যমে প্রত্যেক শ্রমিকের একাউন্ট নাম্বারে প্রতিমাসের বেতন ১৬ হাজার ১৩০ টাকা হারে তিন মাসের মোট ৪৮ হাজার ৩৯০ টাকা আসে। শ্রমিকরা তাদের প্রতিমাসের বেতন শীটে ১৬ হাজার ১৩০ টাকার অনুকূলে স্বাক্ষর করেন। তবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর শ্রমিকদের বেতনশীটে স্বাক্ষর করার পর প্রত্যেক শ্রমিকের নিকট থেকে প্রতি মাসের ২ হাজার ১৩০ টাকা করে তিন মাসে মোট ৬ হাজার ৩৯০ টাকা কেটে রাখে।

ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে মোট ৫১ জন শ্রমিক রয়েছে। অর্থাৎ ৫১ জন শ্রমিকের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৬৩০ টাকা করে তিন মাসে মোট ৩ লক্ষ ২৫ হাজার ৮৯০ টাকা কেটে রেখে আত্মসাৎ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যাহা শ্রম আইন বর্হিভুত।

জানা যায়, ২০১৬ সালে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গালফ সিকিরিটি সার্ভিস প্রা: লি: জনবল নিয়োগের কার্যাদেশ পান। জনবল নিয়োগের সময়ই শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। সদর হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ওয়ার্ডবয়, নিরাপত্তা প্রহরীসহ একাধিক পদে ৫১ জন জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়।

নাম না বলা শর্তে একাধিক শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরা ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে প্রতি মাসের ১৬ হাজার ১৩০ টাকা বেতন সীটে স্বাক্ষর করি। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর আমাদের নিকট হতে প্রতিমাসে বেতনের ২ হাজার ১৩০ টাকা করে তিন মাসের মোট ৬ হাজার ৩৯০ টাকা নগদে এবং যে নগদে দিতে পারে নাই তার বেতন থেকে ৬ হাজার ৩৯০ টাকা কেটে নেয়। আমরা প্রতিমাসের বেতন বাবদ পাই মাত্র ১৪ হাজার টাকা। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে তত্বাবধায়কের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তবে কোনো সমাধান পাইনি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ইনচার্জ হুমায়ুন কবীর বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের কথামত শ্রমিকদের বেতন হতে টাকা নেই এবং সেই টাকা পরিচালক মো: স্বপন খানের একাউন্টে জমা দেই।

বেতন কেটে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে গালফ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রা: লি: এর পরিচালক মো:স্বপন খান বলেন, মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে আমি ৫১ জন শ্রমিকের নিয়োগ দেই। কিন্তু এই হাসপাতালের জনবল সংকট থাকায় আমি মানবিক দিক বিবেচনা করে আরো ৯ জন শ্রমিক অলিখিতভাবে অতিরিক্ত নিয়োগ দেই। সেই ৯ জন শ্রমিকের বেতন দেওয়ার জন্য ৫১ জন শ্রমিকের নিকট হতে প্রতি মাসে ২ হাজার ১৩০ টাকা করে রেখে দেই।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতা আফছার উদ্দিন সরকার ও তত্বাবধায়ক জানেন।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফছার উদ্দিন সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকদের বেতন কেটে নিয়ে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করে তাদের বেতন দিবে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যদি এটা করে থাকে তাহলে তারা এটা নিয়ম বর্হিভুত কাজ করছে। এটা এক রকম শ্রমিক শোষণ।

সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা: মো: আরশ্বাদ উল্লাহ্ বলেন, আমাদের অতিরিক্ত লোক নিয়োগ করার কোন বিধান নেই। আমরা ৫১ জন লোক নিয়োগের আদেশ পেয়েছি এর অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিতে পারবো না। বেতনের টাকা কেটে নেওয়ার বিষয়ে আমার নিকট কেউ লিখিত অভিযোগ করে নাই, যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।