মহাসড়কটি যেন ধান শুকানোর চাতাল; নিরব প্রশাসন

মোঃ ইলিযাস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ

যেখানে নিরাপদ সড়কের জন্য দেশব্যাপী চলছে আন্দোলন, অহরহ ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা ৷ সেখানে দেখা গেছে উল্টো চিত্র ৷ মহাসড়কটি যেন ধান শুকানোর চাতালে পরিণত হয়েছে ৷ নিরব ভূমিকায় আছে প্রশাসন ৷ এমন দৃশ্যটি দেখা যায় ঠাকুরগাঁও জেলার (ঠাকুরগাঁও-বালিয়াডাঙ্গী- রাণীশংকৈল) মহাসড়কটিতে ৷

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মহাসড়কে সেদ্ধ আমন ধান শুকাচ্ছেন আশপাশের বাসিন্দারা। দেখে মনে হচ্ছে মহাসড়কটি যেন ধান শুকানোর চাতাল। এতে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।

বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদ মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, লোলপুকুর ডিএম উচ্চবিদ্যালয় থেকে নেকমরদ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়কে ১০ জনের বেশি কৃষাণ-কৃষাণী ধান শুকাচ্ছেন। আর এ ধান শুকানোর কাজে সহযোগিতা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যরা। একই চিত্র দেখা গেছে বালিয়াডাঙ্গী-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কেও। কালমেঘ বাজার থেকে সদর উপজেলার মৌলানী বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটারজুড়ে সড়কের দুই পাশে প্রায় ৫০ জন কৃষক ধান শুকাচ্ছেন।

ঢাকা থেকে আসা ট্রাকচালক আব্দুল কাদেরের সাথে কাঁচকালী বাজারে দেখা হলে বলেন, মহাসড়কে ধান শুকানোর কারণে খুব সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। একটু অমনোযোগী হলেই দুর্ঘটনা ঘটবে। তা ছাড়া ধান শুকানোর কারণে পুরো পরিবার চলে এসেছে রাস্তার ওপর।

কাঁচকালী গ্রামের ইজিবাইকচালক সাদেকুল ইসলাম জানান, সূর্য ওঠার আগেই রাস্তা ফাঁকা থাকে। সূর্য উঠলে রাস্তায় ধান শুকানোর কাজে লোকজনের কারণে বড় গাড়িগুলোর সাইড দিতে খুব ঝামেলায় পড়তে হয়। অনেক সময় গাড়ি থামানোর প্রয়োজন পড়ে।

বোয়ালধার গ্রামের রফিকুল ইসলাম তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদ মহাসড়কে ধান শুকাচ্ছিলেন। তিনি জানান, আগে ধান শুকানোর জন্য বাড়ির উঠানে চাতাল তৈরি করতাম। মহাসড়ক বাড়ির পাশে হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে এখানে ধান শুকিয়ে নিচ্ছি। তা ছাড়া আবাদি জমিতে ধানের চাতাল তৈরি করলে পরের ফসল উৎপাদনে দেরি হয়ে যায়।

স্বাধীন সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ রায়হান দুলু বলেন, ‘মহাসড়কে ধান শুকানো বন্ধের জন্য আমরা ২০১৮, ১৯ ও ২০ সালে বালিয়াডাঙ্গী চৌরাস্তায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং এমনকি জরিমানাও করা হয়েছে। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছে না।’

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘সভা-সেমিনারে সড়ক দুর্ঘটনারোধে সাধারণ মানুষের নানাভাবে সতর্ক করা হচ্ছে। রাস্তায় ধান কাটা-মাড়াই ও শুকানো বন্ধের জন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ধান শুকানো বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে নিষেধ করা হবে।’
চলতি বছর বালিয়াডাঙ্গী-নেকমরদ ও বালিয়াডাঙ্গী-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক।