মন্ত্রীদের ৮ মাসের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ৮ মাস পূর্ণ করলো। এই ৮ মাসে আওয়ামী লীগ সরকার কেমন দেশ চালিয়েছে তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে।

আওয়ামী লীগের মধ্য থেকেই বলা হয়েছে, ৮ মাসে সরকার যেভাবে পরিচালিত হয়েছে তাতে সন্তুষ্ট নয় আওয়ামী লীগ। এমনকি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সরকার পরিচালনা কার্যক্রমে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী দলের মন্ত্রী এবং নেতাদেরকে সরকারের কার্যক্রম বাড়ানো এবং আরো দায়িত্ব হওয়ার ব্যাপারে বারবার তাগড়া দিচ্ছেন বলেও দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর এ বছরের ৭ জানুয়ারি তৃতীবারের মতো মন্ত্রিসভা গঠন করেছে। মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং ১৪ দলের সহযোগিদের বাদ দিয়ে চমক সৃষ্টি করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন মন্ত্রিসভা কেমন করে তা দেখার অপেক্ষায় ছিল গোটা জাতি। কিন্তু গত ৮ মাসের বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে নতুন মন্ত্রিসভার কাজ জনগনের হৃদয় জয় করতে পারেনি। যদিও টানা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আওয়ামী লীগ ধরে রেখেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সব দলকে সংসদে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, সাফল্যের চেয়ে গত আটমাসে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি।

ডেঙ্গু নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে তা ছিল সরকারের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। রোহিঙ্গা ইস্যু সরকারের জন্য নতুন মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আপাত এর সমাধান হবে এর ইঙ্গিতও পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে আসামে নাগরিক তালিকা নতুন করে সরকারের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি এবং সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকা সরকারের জন্য নতুন সমস্যা হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে। বিশেষ সূত্র জানিয়েছে, গত ৮ মাসে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনা শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে থাকেন সবাই। এটি একটি সরকারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

দেখা যাচ্ছে গত ৮ মাসে সরকার যে ৮ টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, সেই ৮ টি চ্যালেঞ্জই প্রধানমন্ত্রীকে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছে। দরকার হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। আওয়ামী লীগের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে মন্ত্রীরা আছেন কি করতে! প্রত্যেকটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং নির্দেশনা প্রয়োজন পড়ছে। গত ৮ মাসে লক্ষণীয় বিষয় যে, দুয়েকজন মন্ত্রী বাদ দিয়ে সমস্ত মন্ত্রীরা রুটিন কাজে সময় ব্যায় করছেন এবং তারা কোন উদ্ভাবনী নীতি কৌশল আনতে পারছেন না। এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতাও অধিকাংশ মন্ত্রীর নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, এরফলে সরকারের যে লক্ষ্য এবং সামগ্রিক উন্নয়ন আকাঙ্খা তা স্থিমিত হয়ে পড়েছে। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর শুরুতে যেভাবে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল, কর্মচাঞ্চল্যের একটা উৎসব তৈরী করেছিল এবার সেটা ম্রিয়মান। বরং সরকারকে কোনঠাসা এবং অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সরকারের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সরকার এক বার্তা (ওয়ান গভমেন্ট ওয়ান মেসেজ যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন। কেউ যেন একই বিষয়ে পৃথক পৃথক অবস্থান থেকে বক্তব্য না দেন, তাও অনুষ্ঠিত হয়নি। বরং দেখা যাচ্ছে যে, একেক বিষয় নিয়ে একেকজন একই বক্তব্য রাখছেন। এ কারণেই সরকারের মধ্যে একটা অগোছালো ভাব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আশাবাদ নিয়ে নতুনদেরকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়েছিলেন। সেই আশাবাদ প্রথম ৮ মাসে পূরণ হয়নি। এখন সামনের দিনগুলোতে নতুন মন্ত্রীরা সরকার পরিচালনায় নিজেদের কতটুকু উপযুক্ত করতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়।