ভোটের আগে আওয়ামী লীগের ৫ টার্গেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী দুই বছরের কম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রথম ধাপ হিসেবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। গতকাল নতুন নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ কতগুলো কাজ করতে চায় এবং এই কাজগুলোর উপর আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাফল্যের অনেকখানি নির্ভর করছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। যে কাজগুলি আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে করতে চায় তার মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য রয়েছে ৫টি।

১. যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন: আওয়ামী লীগের আশু করণীয় হলো নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা। এই সম্পর্ক উন্নয়নের উপর আগামী নির্বাচনের অনেকখানি নির্ভর করছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা বলেছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। কোনো কোনো বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা করা হচ্ছে এবং মার্কিন প্রশাসনের কাছে নেতিবাচক তথ্য দেওয়া হচ্ছে। এর ব্যাপারে আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছি। আওয়ামী লীগ কূটনৈতিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একই সাথে ভারতের সঙ্গেও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু কিছু বিষয়ে অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। এই অস্বস্তিও বাংলাদেশ দূর করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক নেতা ভারত সফর করেছেন। সামনে আরো সফর হবে। রাজনৈতিক সংলাপের পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবেও দুই দেশের সম্পর্কের অস্বস্তিগুলো কাটিয়ে তোলার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।

২. দলের জাতীয় কাউন্সিল: চলতি বছরেই আওয়ামী লীগ জাতীয় কাউন্সিল করবে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দলের ভেতরে অন্তঃকলহ বিরোধ এবং বিভক্তিগুলো কাটিয়ে তুলতে চায়। আর একারণেই নির্বাচনের অন্তত এক বছর আগে আওয়ামী লীগ কাউন্সিল সম্পন্ন করতে চায়। নতুন নেতৃত্বের হাতে আওয়ামী লীগ দায়িত্ব দিতে চায়। আর সে লক্ষ্যে এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলেই আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

৩. জোটের পরিধি বাড়ানো: আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যের নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করতে চাচ্ছে। আর সে লক্ষ্যে যে সমস্ত দলগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেন, যারা যুদ্ধাপরাধ, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদেরকে এক সূত্রে গ্রথিত করতে চায়। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, এখন ১৪ দলীয় জোট এবং মহাজোটের মধ্যে যে অস্বস্তি আছে, সেই অস্বস্তিগুলো যথাসম্ভব কাটিয়ে তােলার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। আর এর মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অসাম্প্রদায়িক চেতনার সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সূত্রে গ্রথিত করতে চায় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলটি।

৪. নির্বাচনী প্রচারণার মূল ইস্যু নির্ধারণ করা: আগামী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী প্রচারণার মূল ইস্যু নির্ধারণ করার কাজ শুরু করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রচারণার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখছে। প্রথমত, একটি নির্বাচনী ইশতেহার। গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চমক জাগিয়েছিল। বিগত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্লোগান সামনে এনেছিল সেটি তরুন সমাজকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করেছিল। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমৃদ্ধির যে রূপকল্প দিয়েছিল সেটিও অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলে সমাদৃত হয়েছিল। এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচন এর মূল প্রতিপাদ্য কি থাকবে সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। একদিকে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন অভিযাত্রা, অন্যদিকে শেখ হাসিনার ইমেজ এই দুটিই হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার মূল ইস্যু বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।

৫. বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করা: এবার নির্বাচন যেনো অংশগ্রহণ মূলক হয় সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের একটি প্রত্যাশা এবং চাওয়া-পাওয়া আছে। আর এটিকে সামনে রেখেই বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করার একটি পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের। তবে সেই পরিকল্পনা কি তা এখনই বলতে রাজি নয় আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো।