ভাসমানদের খাবার হোটেল সান্তাহার স্টেশন

বগুড়ার সান্তাহার জংশন রেলওয়ে স্টেশনে বসবাস করা ভাসমান মানুষদের ৩ বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন স্থানীয় রাজা নামের এক ব্যবসায়ী।

জানা যায়, উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন স্টেশন সান্তাহার। কয়েকটি জেলার মোহনায় অবস্থিত এই স্টেশনটি। এই স্টেশন ও স্টেশনের আশপাশে নদীতে বাড়ি-ঘর হারানো মানুষ, ভিক্ষুক, অন্ধ, ফেরিওয়ালা, অসহায়, ঠিকানা বিহীন হতদরিদ্র, পাগলসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির প্রায় দুই শতাধিক ছিন্নমূল ভাসমান মানুষ বসবাস করতো। কেউ সারা দিন ভিক্ষা করে কিংবা মানুষের বাড়িতে, হোটেলে কাজ করে এই স্টেশনে এসে কোনমতে রাত কাটাতো। যাদের মূল আয়ের উৎসই ছিলো ট্রেন, স্টেশনের আশপাশের হোটেল ও বাসা-বাড়ি।

সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব মানুষরা পড়েছেন মহাবিপদে। আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহারে-অর্ধহারে তাদের দিন কাটতে শুরু করলে স্থানীয় এক রেল কর্মচারীর ছেলে আজিজুল হক রাজা স্টেশন মাস্টারের সহযোগিতায় এসব ভাসমান মানুষের স্টেশনে ৩ বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর থেকে তা এখনও চলমান।

বর্তমানে এই সান্তাহার জংশন স্টেশনটি ভাসমানদের হোটেলে পরিণত হয়েছে। স্টেশনের ভোজনালয় বন্ধ থাকায় সেখানকার কর্মচারীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ভাসমানদের জন্য ৩ বেলা এই খাবার রান্না করছেন। সান্তাহার ও তার আশপাশের অনেক বিত্তবানরা এই ভাসমানদের ৩ বেলা খাওয়াতে সহযোগিতা করছেন। 

যতদিন না সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে ততদিন ভাসমানদের জন্য এই খাওয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান আয়োজকরা।

এছাড়াও, এসব ভাসমানদের মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। যারা অসুস্থ্য তাদের চিকিৎসা সেবাও প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া এদেরকে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।

ভিক্ষুক লিটন, কামালসহ অনেকেই জানান, আমরা ঠিকানা বিহীন অন্ধ, ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষ। স্টেশনই আমাদের বাড়ি-ঘর। এখানে এসে ৩ বেলা খাবার পাচ্ছি। রাজা ভাই আমাদের খাওয়াচ্ছেন। 

প্রধান উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী আজিজুল হক রাজা বলেন, ট্রেন, স্টেশন ও স্টেশনের আশপাশের হোটেল, দোকান, বাসা-বাড়িগুলো ছিলো এসব মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। কিন্তু সব কিছু বন্ধ হওয়ার পর এই মানুষগুলো আমার কাছে খাবার চাইতে আসে তখন আমি প্রথমে ১০ কেজি চাল ও কিছু ডালের ব্যবস্থা করি এদের খাওয়ার জন্য। 

তিনি বলেন, স্টেশনের ভোজনালয় বন্ধ থাকায় স্টেশন মাস্টারের সার্বিক সহযোগিতায় ২৪ মার্চ থেকে এই ভাসমান মানুষদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে আসছি। বর্তমানে অনেকের সহযোগিতা পাচ্ছি। তবে স্টেশন মাস্টার ও তার অন্যান্য কর্মচারীর সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছি বলেই এটি করা সম্ভব হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।

সান্তাহার জংশন রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মো. রেজাউল করিম ডালিম জানান, রাজার এই উদ্যোগের সঙ্গে আমি একত্মতা ঘোষণা করে আমার স্টেশনের অন্যান্য লোকদের সহযোগিতা নিয়ে এসব ভাসমান মানুষদের ৩ বেলা খাওয়ানোর চেষ্টা করছি মাত্র। কারণ মানুষ মানুষের জন্য। আমরা যদি এসব মানুষের পাশে এসে না দাঁড়াই তাহলে এই সংকটময় সময়ে তো এরা না খেয়ে মারা যাবে। সকলের উচিৎ সামর্থ অনুযায়ী এই শ্রেণির মানুষদের পাশে এসে দাঁড়ানো।