ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে শ্রমিক ধর্মঘট : বেনাপোল বন্দরে অনিদিষ্টকালের জন্য আমদানি-রফতানি বন্ধ

জসিম উদ্দীন, বেনাপোল প্রতিনিধি

বেনাপোল স্থলবন্দরের সাথে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সকল প্রকার আমদানি – রফতানি বানিজ্য অনিদিষ্টকালের জন্য আজ সোমবার সকাল থেকে বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ব্যবহারকারী ৪টি সংগঠন । ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সেন্ট্রাল পার্কিং (ল্যান্ড পোর্ট) এর নতুন ম্যানেজার কমলেশ সাহানীর খামখেয়ালি পন্য আমদানি রফতানি বাণিজ্য ব্যহত হচ্ছে বলে দাবি বন্দর ব্যবহারকারী ৪টি সংগঠনের । নতুন ম্যানেজার তাদের সাথে কথা না বলে নতুন নতুন আইন তৈরি করছে। নতুন ল্যান্ড পোট ম্যানেজারের বিরুদ্ধে পরিবহন কর্মীরা অভিযোগ এনেছেন যে, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) কে কাজে লাগিয়ে তাদের কে বন্দর এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
আমদানি-রফতানি কাজে নানা হয়রানি বন্ধসহ নতুন ল্যান্ড পোট ম্যানেজার কমলেশ সাহানীর প্রত্যাহারের দাবিতে গত এক সপ্তাহ দফায় দফায় বৈঠক ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন তারা।গত শনি ও রবিবার তারা মাইকিং করে সকলকে কাজ করা থেকে বিরত থাকার আহবান জানান। রোববারের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে সোমবার সকাল থেকে পেট্রাপোল বন্দরে অনিদিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বন্দর ব্যবহারকারীরা।ফলে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানী কার্যক্রম বন্ধ রযেছে। ধর্মঘটের ডাক দেওয়া সংগঠন গুলো বনগাঁ গুডস ট্রান্সপোর্ট এসোসিয়েশন, বনগাঁ ট্রাক মালিক সমিতি, পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও বনগাঁ মহকুমা ট্রাক শ্রমিক ইউনয়ন।
পেট্রাপোল এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন পার্কিংয়ে তাঁদের লোকজনকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে আমদানি এবং রফতানিও বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প কোন রাস্তা নেই। একটি গাড়ি বাংলাদেশে ঢোকার সময় অনেক রকম কাজ আছে। সেই কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ল্যান্ড পোট ম্যানেজার সেটা বন্ধ করেছেন। তাঁর নির্দেশে বিএসএফ শ্রমিকদের বন্দর এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না।

পেট্রাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্রী কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বিএসএফ পেট্রাপোল আইসিপিতে ঢুকতে বাধা দিচ্ছে পরিবহণ কর্মীদের। ফলে সমস্যা হচ্ছে বাণিজ্যের কাজে।এ নিয়ে গত সপ্তাহে দুই দিন চার ঘন্টা করে দু দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ রাখা হয়েছিল।আমরা বন্দও কতৃপক্ষকে সমস্যা সমাধানের জন্য বলেছিলাম ।কিন্তু বন্দর কতৃপক্ষ আমাদের কথা কর্ণপাত করেনি।ফলে পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের আইসিপিতে ঢুকতে দেওয়ার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের দাবি, নতুন কার্ড তৈরি না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো নিয়মে তাদের আইসিপিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দাবি মানা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত দু দেশের মধ্যে বানিজ্য বন্ধ রেখে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন।
ভারতের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, সা¤প্রতিক সময়ে আইসিপি-পেট্রাপোলে একাধিক চোরাচালানের ঘটনা ঘটেছে সেই সব নজরে আসতেই, বিএসএফ তাঁদের নজরদারি এবং সতর্কতা ব্যবস্থা আরও কড়াকড়ি করার জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। স¤প্রতি দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিবহন কর্মীদের সেখানে যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বিএসএফ জানিয়েছে, জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী চালককে কোনও ভাবেই বাংলাদেশে যেতে দেওয়া যাবে না কারণ এই ধরনের চালকরা জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে শুল্ক বিভাগ থেকে গাড়ির পাস নেয়, যার ভিত্তিতে বিএসএফ ট্রাকগুলিকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য, বিএসএফ বনগাঁ ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনকে একটি স্থায়ী অপারেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করতে বলেছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে সে দেশের বন্দর ব্যবহার সংগঠনের ধর্মঘটের কারনে সকাল থেকে দু দেশের মধ্যে সকল প্রকার আমদানি রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও আমাদের বন্দরে লোড আনলোড প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রয়েছে।