ভাগ্য আর জটিল সমীকরণে টাইগারদের সেমিফাইনাল


বিশ্বকাপের অর্ধেক পথ পার হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশের সমর্থকদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশ কি সেমিফাইনালে যাচ্ছে?

ইতিমধ্যেই বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার। তবে সুখের বিষয় হলো— এখনও পর্যন্ত আলোচনায় আছে বাংলাদেশ। পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ রয়েছে ৫ নম্বরে। সম্ভাব্য চার সেমিফাইনালিস্টের একটি হিসেবে এখনও মাশরাফিদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে। আর তা হবেই না বা কেন। আফগানিস্তান ম্যাচ শেষে সাকিব আল হাসান বলছিলেন, ‘গণিতের হিসাবে কাজটা একটু কঠিন। তবে একেবারে অসম্ভব না।’

সাকিবের কথার পেছনে যুক্তিটা কী, সেটাই এবার একটু দেখে নেয়া যাক। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছাড়া বাকি সব টিমই সাতটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে। দশ দলের এই টুর্নামেন্টে ইতিমধ্যে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। বুধবার পাকিস্তানকে হারাতে পারলে ১১ পয়েন্ট থেকে ১৩ পয়েন্টে সরাসরি সেমিতে চলে যাবে নিউজিল্যান্ড। আর যদি হেরেও যায় তাদের সামনে সুযোগ রয়েছে। রয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ। বড় ধরনের নাটকীয়তা না ঘটলে সেমির টিকিট পেতে পারে ভারতও। এ পর্যন্ত ৫ ম্যাচ খেলে ৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তৃতীয় স্থানে আছে তারা। ভারতের বড় সুবিধা হলো— তাদের হাতে আরো চারটি ম্যাচ আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাথে এই চার ম্যাচের মধ্যে দুটি জয় পেলেই তাদের চলে।

শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে গত দুটি ম্যাচ হেরে বেকায়দায় রয়েছে ইংল্যান্ড। সাত ম্যাচে স্বাগতিকদের পয়েন্ট আট। বাকি দুই ম্যাচে ইংলিশদের সামনে রয়েছে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মতো শক্ত প্রতিপক্ষ। সমান ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে ইয়ন মর্গানদের ঘাড়ের ওপর নিশ্বাস ফেলছে মাশরাফিরা। বাংলাদেশের দুটি ম্যাচ বাকি ভারত ও পাকিস্তানের সাথে। সেক্ষেত্রে সেমিফাইনালের চার নম্বর টিকিটটি বাংলাদেশের বরাতে জুটতেও পারে যদি পরের দুই ম্যাচ ম্যাশ বাহিনী জিতে যায় আর পাশাপাশি ইংলিশদের পরাজয় অব্যাহত থাকে। যদি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ হেরেও যায় তবে শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততেই হবে টাইগারদের। ম্যাচটি হবে বাংলাদেশের জন্য ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। কারণ নিউজিল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তান জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ৯। আর বাংলাদেশ ভারতের কাছে হেরে পাকিস্তানের সঙ্গে জিতলে মাশরাফিদেরও পয়েন্ট হবে ৯। সেক্ষেত্রে হেড টু হেড ম্যাচে জয়ী দল হিসেবে বাংলাদেশ যাবে সেমিতে। কিন্তু ইংল্যান্ড হারের বৃত্তে আটকে থাকলে আর পাকিস্তান সবগুলো ম্যাচ জিতলে তারা ১১ পয়েন্ট নিয়েই সেমির টিকিট পাবে।

অন্যদিকে ইংল্যান্ড যদি একটি ম্যাচও জিতে যায় তাদের পয়েন্ট হবে ১০। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দলকেই হারাতে হবে। তখন বাংলাদেশের পয়েন্ট হবে ১১।

বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে শ্রীলঙ্কাও। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পাওয়া শ্রীলঙ্কার সামনে আরো তিনটি ম্যাচ আছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারতের সাথে। এই ম্যাচগুলোতে শ্রীলঙ্কা অন্তত দুটি ম্যাচ জিতলেই হিসাব নিকাশ পাল্টে যাবে।

এখন দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আফগানিস্তানের সেমিতে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে। আফগানিস্তানের ঝুড়িতে নেই কোনো পয়েন্ট। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পয়েন্ট মাত্র ৩।

সুতরাং, সব মিলিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সেমিতে ওঠার কাজটা একেবারে অসম্ভব না হলেও অনেকটাই কঠিন। বিষয়টা শুধু ম্যাচ জয়ের ওপরই নির্ভর করছে না, নির্ভর করছে ভাগ্যের ওপরও।