ভাইরাল: ‘আইভীর মাথায় হাত দিয়ে শামীম ওসমানের দোয়া’

এই আমার দেশ ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার চলাকাল শামীম ওসমান ও সেলিনা হায়াৎ আইভীর এ ছবিটি নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে।

ছবিটির উৎস খুঁজে বের করতে যেয়ে দেখা যায় ২০২১ সালের ২৭ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে তোলা হয়েছিল সেটি। সেদিন আইভীর বাড়িতে গিয়ে তার মাথায় হাত রেখে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন শামীম। এর দুই দিন আগে বিকেলে শহরের দেওভোগের বাসায় ৭০ বছর বয়সে মারা যান আইভীর মা মমতাজ বেগম।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর মাথায় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হাত। একই দলের দুই নেতার মধ্যে আগের প্রজন্ম থেকে চলে আসা দ্বন্দ্বের মধ্যে চলছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই সময় ছবিটি তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে।

সাম্প্রতিক মনে করে ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। তবে অনুসন্ধান বলছে, ছবিটি ৫ মাস ১৬ দিন আগের।

আগামী ১৬ জানুয়ারির ভোটে শামীম ওসমান কোনো অংশ নন, সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি প্রচারেও নামতে পারেন না। তবে আইভীর আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। নৌকার প্রার্থী নিজ দলের সংসদ সদস্যকে বলেছেন ‘গডফাদার’।

আইভীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের মার্কা ধানের শীষ নয়, হাতি। এর কারণ, আনুষ্ঠানিকভাবে এই ভোট বর্জন করেছে দলটি। তার পরও ভোটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াইয়ের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।

এর মধ্যে আইভী অভিযোগ করছেন, তৈমূর আসলে শামীমের প্রার্থী। আর এই অভিযোগের মধ্যে সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে নৌকার পক্ষে তার অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। পর দিনই আইভীর মাথায় হাত রেখে শামীম ওসমানের ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

এর দুই দিন আগে বিকেলে শহরের দেওভোগের বাসায় ৭০ বছর বয়সে মারা যান আইভীর মা মমতাজ বেগম।

আইভীর বাড়িতে শামীম ওসমান- এমন খবরে সেখানে ছুটে যান গণমাধ্যমকর্মীরা। তাদের ক্যামেরায় বন্দি হয় এ ছবিটি।
আইভীর বাড়িতে যাওয়ার আগে তার মায়ের করবও জিয়ারত করেন শামীম ওসমান

দৈনিক ইত্তেফাকে নারায়ণগঞ্জের ফটোসাংবাদিক তাপস সাহা তুলেছিলেন সেই ছবিটি।

তিনি বলেন, ‘শামীম ওসমান যখন আইভীর বাড়িতে এলেন, আমি তাকে দেখে অবাক হই। পরে ভাবলাম মেয়রের মায়ের মৃত্যু হয়েছে, সান্ত্বনা দিতে আসতেই পারেন। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি যখন দেখি আইভীর মাথায় হাত রেখে শামীম ওসমান তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার মায়ের স্মৃতিচারণ করছিলেন।

‘আমি ভাবতে পারিনি তাদের এমন একটা ছবি আমার ক্যামেরায় বন্দি করতে পারব- উল্লেখ করে তাপস সাহা জানান, ছবিটি তিনি তার কাছে সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

ফটোসাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘আইভীর মায়ের মৃত্যুর পর সেখানে আরও অনেকে গিয়েছিলেন। শামীম ওসমানের বড় ভাই এমপি সেলিম ওসমানও গেছেন। তবে সবচেয়ে অবাক হওয়ার মতো ঘটনা ছিল, যেদিন শামীম ওসমান আইভীর বাড়িতে গিয়ে তার মাথায় হাত রাখেন। শুধু আমি নই, সেখানে থাকা অনেক ফটোসাংবাদিক এ ছবিটি তুলতে অস্থির হয়ে ওঠেন। আমরা তো ভেবেছিলাম এই বুঝি নারায়ণগঞ্জের সব ঝামেলা মিটে গেল। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি।’

নানা সময়ে বিরোধের জেরে আলোচনায় এসেছেন আইভী ও শামীম ওসমান। ২০১১ সালের প্রথম সিটি নির্বাচনে দুজন ছিলেন পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী।

তবে দ্বন্দ্বের শুরু আরও বহু বছর আগের। দুই নেতার বাবার আমলে।

শামীম ওসমানের দাদা খান বাহাদুর এম ওসমান আলী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তার ছেলে ও শামীম ওসমানের বাবা আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জোহাও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে অবদান রেখেছেন।

পাকিস্তান আমলে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিকাশে অবদান রাখেন আরেক নেতা আলী আহম্মদ চুনকা। এক দলের হলেও তার সঙ্গে শামসুজ্জোহার দ্বন্দ্ব ছিল। এই চুনকার মেয়েই আইভী। পূর্বপুরুষদের দ্বন্দ্ব এখন বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন শামীম-আইভী।

সিটি নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সড়কে হকার বসানো নিয়ে আইভী ও শামীম ওসমানের সমর্থক এবং হকারদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আইভীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।

২০১৬ সালের সিটি নির্বাচনের সময় আইভীকে ‘ছোট বোন’ আখ্যা দিয়ে তাকে নৌকা প্রতীকের ছবিসহ শাড়ি উপহার দেন শামীম ওসমান।

তবে এবার কোনো উপহার না দিয়ে শামীম ওসমান এই ভোটে সমর্থন দিয়েছেন আইভীর প্রতীককে, প্রার্থীকে নয়।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, ‘কে প্রার্থী, হু কেয়ার্স? প্রার্থী আমগাছ হোক, আর কলাগাছ হোক। সব সময় নৌকার প্রতি সাপোর্ট।’