ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ

অনলাইন ডেস্ক: বিশ্বকাপে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল আসেনি। কিছুটা প্রকাশ্যে, কিছুটা চাপা হতাশা নিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যায় টাইগাররা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব আল হাসান সফরের সঙ্গী হলেন না ব্যক্তিগত কারণে। বিয়ে করতে গিয়ে যাওয়া হলো না লিটন দাসেরও। দেশ ছাড়ার আগের দিন আরো বড় দুঃসংবাদ এল। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেলেন দলের নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা এবং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। বিসিবির ঝটপট সিদ্ধান্তে তামিমকে করা হলো অধিনায়ক। এনামুল হক বিজয় আর শফিউল ইসলামকে নিয়ে উড়াল দেয়া হল লঙ্কায়।

এত টালমাটাল অবস্থায় কি যানি কি হয়! সমর্থকদের এমন আশঙ্কা নিয়েই লঙ্কায় পাড়ি জমিয়েছিল বাংলাদেশ দল। যা হলো তা মোটেও দৃষ্টি নন্দন নয়। যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের ফেভারিট ভাবতেই পছন্দ করেন টাইগার সমর্থকরা তাদের কাছে হতে হলো হোয়াইটওয়াশ।

সিরিজের তিনটি ম্যাচেই হার, শুধু হারই নয়। এমন ছন্নছাড়া বাংলাদেশকে সবশেষ কবে দেখা গেছে তা মনে করতে গেলেও মাথা চুলকাতে হবে। সিরিজের তিনটি ম্যাচই হলো কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে। যেখানে লাসিথ মালিঙ্গার বিদায়ী ম্যাচে অর্থাৎ, প্রথম ম্যাচে ৯১ রানের বিশাল হারে শুরু। পরের ম্যাচটি আগে ব্যাট করে মাত্র ২৩৮ রানে অলআউট। স্বাগতিকরা ম্যাচ জিতে নিলো ৭ উইকেটে। আর ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ হলো শেষ ম্যাচে। প্রতিদ্বন্দিতাহীন ম্যাচটিতে ১২২ রানের বিশাল পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো টাইগাররা।

আগের দুই ম্যাচে ব্যর্থ সৌম্য এদিন একপাশ আগলে খেললেন বটে কিন্তু সঙ্গী পেলেন না। ইনিংসে ৭ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্ক ছুতেই পারলেন না। রুবেল হোসেন রান আউট হয়ে শেষ জুটি ভাঙার আগে তাইজুল ইসলামের ২৮ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংসটি লজ্জাই দিয়ে গেলো মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ সাব্বিরদের।

টার্গেটটা বড় ছিল। আর গত দুই ম্যাচে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্সের বিচারে লঙ্কানদের ২৯৪ রান রীতিমতো পহাড়সম। নিজেদের বাজে ফর্ম কাটাতে পারলেন না টাইগাররা। ব্যর্থাতার ষোলকলা পূর্ণ করে হোয়াইটওয়াশ হলো তামিমবাহিনী।

ব্যার্থতার গোলকধাদা থেকে বের হয়ে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পাররেন না তামিম ইকবাল। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই মাত্র ২ রানে বিদায় নেন তিনি। দীর্ঘদিন পর দলে ডাক পাওয়া এনামুল হক বিজায়ও ব্যার্থ হলেন। সৌম্য সরকার একপাশ আগলে লড়াই চালিয়ে গেলেও সঙ্গী পেলেন না। মুশফিক ১০ রানে বিদায় নেয়ার পর মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির, মিরাজরা কেউই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারলেন না।


চাপ সামলে সৌম্য মিরাকল কিছু করে দেখাতে পারলেন না। হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ম্যাচে অন্তত সম্মানজনক স্কোর করার শেষ ভরসা সৌম্যকে ৬৯ রানে বোল্ড করেন ধনঞ্জয়া। এরপর তাইজুলের ব্যাট থেকে কিছু রান আসলেও তা বাংলাদেশকে বড় হারের লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারেনি।

এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৯৪ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। ম্যাচের শুরু থেকে রানের চাকা বেশ টেনেই রেখেছিলেন টাইগার বোলাররা। কিন্তু শেষ দিকে দ্রুত রান তুলে নিয়ে বড় সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ফেলে লঙ্কানরা।

শুরুতেই আভিশকা ফার্নান্ডোকে তুলে নেন শফিউল ইসলাম। এরপর কুশাল পেরেরাকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর চাপ কাটিয়ে উঠেন অধিনায়ক করুনারত্মে। তারা দুজন ফিরে যাওয়ার পর ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি গড়েন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এবং কুশাল মেন্ডিস। সৌম্য সরকারের শিকার হওয়ার আগে মেন্ডিস করেন ৫৪ রান। কিন্তু দাসুন সানাকার ১৪ বলে ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করাতে সাহায্য করে শ্রীলঙ্কাকে। শেষ ওভারে সৌম্য বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ম্যাথিউস খেলে যান কার্যকরী ৮৭ রানের ইনিংস।

বল হাতে ৩টি করে উইকেট তুলে নেন শফিউল ইসলাম এবং সৌম্য সরকার। অন্যদের বেহিসেবি রান খরচার দিনে সবচেয়ে কিপটে ছিলেন তাইজুল। ১০ ওভার বল করে ৩৪ রান দিয়ে তিন তুলে নেন ১টি উইকেট।