বেপরোয়া দর্শনা যুবলীগ, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর বসতবাড়ী ভেঙেচুরে দখলের চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার : বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দর্শনা যুবলীগ। এদের চিহ্নিত কিছু নেতাকর্মীকে কোনোভাবেই সামাল দেওয়া হচ্ছে না। ফলে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এরা একের পর এক পেশি ও রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করেই চলেছে। চাঁদাবাজী টেন্ডারবাজী, স্মাগলিং, মাদক ব্যবসা থেকে খুনের মতো নৃশংস ঘটনায়ও তাদের নাম জড়াচ্ছে-জড়িয়েছে। তাদের এই যথেচ্ছাচারের আরও এক নজির সৃষ্টি হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার।

দর্শনার কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর রহমান মজনু- যিনি দর্শনার আবাল-বৃদ্ধবণিতার কাছে একজন সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। আজীবন বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, কেরু এন্ড কোম্পানীর একসময়ের ডাকসাইটে শ্রমিক নেতা, ট্রেড ইউনিয়নে দক্ষতাবৃদ্ধির জন্য যিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে অধ্যয়ন করেছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কমিউনিষ্ট পার্টির বর্তমান সভাপতি। খোদ তাঁর বসত বাড়ীর একাংশ গতকাল দিনে দুপুরে ভেঙ্গে-চুরে দখল চেষ্টা চালানো হয়েছে। এখানেও ছিল যুবলীগের একাংশের সরাসরি প্রশ্রয়।

অভিযোগে জানা গেছে, সিনিয়র সিটিজেন সৈয়দ মজনু জরুরী কাজে ঢাকায় থাকার সুযোগ নিয়ে তার স্ত্রী অংকুর স্কুলের সাবেক শিক্ষিকার বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে হাতুড়ি শাবল নিয়ে বসত বাড়ীতে এ হামলা চালানো হয়। বসতবাড়ীতে হামলার এ খবর ঢাকা থেকে ফেরার পথে পরিবহনে থাকা সৈয়দ মজনু তাৎক্ষণিক জেনে তিনি স্থানীয় থানায় ফোন করেন। থানা যথারীতি তেমন গুরুত্ব না দিলে তিনি ৯৯৯-এ অভিযোগ করেন। অবশেষে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

সৈয়দ মজনু পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, দর্শনা থানার, পৌর এলাকার প্রাণকেন্দ্র রেলবাজার ফুলতলাসয় তাদের বসতবাড়ী। দীর্ঘকাল তারা এই বসত বাড়ীতে শান্তি-শৃঙ্খলার সঙ্গে বসবাস করে আসছেন। বর্তমানে এই সম্পত্তি খুব মূল্যবান হওয়ায় দুরভিসন্ধিতে থেকে কয়েকবছর আগে প্রতিবেশীদের একজন তার ২৫ পয়েন্ট জমি বসতবাড়ীর মধ্যে রয়েছে দাবী করায় বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে।
বর্তমানে বিবাদী রফিকুল ইসলাম ববি দর্শনা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি একই সাথে সে দর্শনা পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ৪ নং বিবাদী বাপ্পা, ৩ নং বিবাদীর ববির আপন ছোট ভাই এবং দর্শনা পৌর ছাত্রলীগের সহ সভাপতির নেতৃত্বে গতকাল ১) মোঃ পলাশ হোসেন(৪২), পিতা-মৃত বদরুল আলম, সাং-মোহাম্মদপুর, ২) মোঃ শিমুল (৪১), পিতা- মোঃ হাবিবুল্লাহ্, সাং-শ্যামপুর, ৩) মোঃ রফিকুল ইসলাম ববি (৪৫), ৪) মোঃ বাপ্পা (৩৮), উভয় পিতা-মোঃ আঃ খালেক, উভয় সাং- রেলবাজার, দর্শনা
৫) রাজিব (৪৫), পিতা- অজ্ঞাত, সাং-অজ্ঞাত সর্ব থানা-দর্শনা, জেলা-চুয়াডাঙ্গাসহ অজ্ঞাতনামা আরো ৬/৭ জন এ হামলা চালায়।
ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, ০১, ০৩ এবং ০৪ নং বিবাদীরা পরস্পর আত্মীয়। তারা এলাকায় রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী। বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর রহমানের বসতবাড়ী দর্শনা রেলবাজার সংলগ্ন দর্শনার প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ উল্লেখিত বিবাদীরা তাহার বসতবাড়ীর একাংশ দখলের চেষ্টা করিতেছিল। ঘটনার দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর রহমান বাড়ী না থাকায় তার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬৬) বাড়ীতে একা ছিল। এই সুযোগে উল্লেখিত বিবাদীরা বেআইনী জনতাবদ্ধ হয়ে সৈয়দ মজনুর বসতবাড়ীর পশ্চিম পাশে অবস্থিত ০১ নং বিবাদীর দুলাভাই এবং ০৩ ও ০৪ নং বিবাদীদ্বয়ের চাচা আব্দুস সামাদ খানের বসতবাড়ী সংলগ্ন বীর সৈয়দ মজনুর বসতবাড়ীর পশ্চিম পাশের দেওয়াল ভাংচুর করে তার বাড়ীতে অনধিকার প্রবেশ করে এবং উক্ত দেওয়াল সংলগ্ন বসতঘর ভাংচুর করে লুটপাট চালায় এবং দখলের চেষ্টা করে।

ঐ সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর রহমানের স্ত্রী সাবেক শিক্ষিকা বিবাদীদের এই কাজের প্রতিবাদ করতে গেলে ০১ ও ০২ নং বিবাদী অকথ্য ভাষায় তাকে গালমন্দ করে এবং বিভিন্নভাবে হেনেস্তা করাসহ তার জীবন নাশের হুমকি দেয়। পরে দর্শনা থানায় বিষয়টি জানানো হলে থানা থেকে পুলিশ এসে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বর্তমানেও বিবাদীগণ বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মজনুর রহমানের পরিবারকে তাহার পৈতৃক বসতবাড়ী থেকে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। তার পরিবার বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

এটি দর্শনার প্রেক্ষাপটে সামান্য একটি ঘটনামাত্র। যুবলীগের আর এক নেতার নামেও রয়েছে ১টি হত্যা ৪টি মাদক ও চোরাচালানী মামলা সহ মোট ৫টি মামলা। অন্যদিকে আর এক নেতার নামে ২টি হত্যা মামলা ৬টি মাদক ও চোরাচালানী মামলাসহ মোট ৮টি মামলা। যুবলীগ নামধারী এমন চিহ্নিত নেতাদের নাম দর্শনার সবার জানা। তবে এরা কি এভাবেই পার পেয়ে যাবে? এদের খুঁটির জোর কোথায়? আর শেষই বা কোথায়? এটি কয়েকমাস যাবৎ পর্যবেক্ষণ করছে দৈনিক এই আমার দেশ পত্রিকা। খুব শিগগিরই উন্মোচন করা হবে এদের ইতিবৃত্ত।