বেনাপোল কাস্টমসে ১১ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা

এস এম মারুফ, ক্রাইম রিপোর্টারঃ দেশের বৃহত্তর স্থল বন্দর ও দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজস্ব আহরণকারী হিসাবে পরিচিত বেনাপোল কাস্টমস হাউজে করোনার প্রাদুর্ভাবে চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) গত ১১ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৩ হাজার ৭০ কোটি ১২ লাখ টাকা ঘাটতি হয়েছে। তবে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বৈধ সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত সহ নানান কারনে ব্যবসায়ীরা এপথে আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় অর্থবছর শুরুতেই রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে ছিল বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। এরপর করোনার  ধাক্ষায়  এপথে ভারতের সাথে টানা  আড়াই মাস আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আহরণ নেমে আসে অর্ধেকে।

কাস্টমস সুত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড(এনবিআর) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের উপর ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বেনাপোল কাস্টমস হাউজকে । চলতি এ অর্থবছরে প্রথম ১১ মাসে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেওয়া হয় ৫ হাজার ৬শ ৬ কোটি ৭৫ লাখ  টাকা। এসময় লক্ষ্য মাত্রার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আদায় করে মাত্র ২ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৩ লাখ  টাকা। এখানে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৭০ কোটি  ১২ লাখ টাকা। এসময় ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেঃটন আমদানি হয়েছে।

এর আগেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল। এসময় লক্ষ্যমাত্রা  দেওয়া হয়েছিল ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা।  আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, যে ভাবে শুরু থেকেই ঘাটতি হয়ে আসছে তাতে চলতি অর্থবছর শেষে বিপুল পরিমানে ঘাটতি দাড়াবে। বার বার রাজস্ব ঘাটতির কারণ হিসাবে তারা মনে করছেন,  চাহিদা অনুপাতে বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়া এবং উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

বেনাপোল ট্যান্সপোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, পণ্য ছাড়করনের ক্ষেত্রে  বৈধ সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়ায় দিন দিন আমদানি কমে যাচ্ছে। যার কারণে রাজস্বও ঘাটতি হচ্ছে।

বেনাপোল আমদানি ,রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, আড়াউ মাস এপথে আমদানি বন্ধ ছিল। এতে রাজস্ব ঘাটতি আরো বেশি হয়েছে। এপথে রাজস্ব আয় বাড়াতে হলে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন বাড়াতে হবে। এছাড়া বন্দরে বার বার রহস্য জনক অগ্নিকান্ডে অনেক ব্যবসায়ীরা পুজি হারিয়ে পথে বসেছেন। বন্দর তাদের কোন ক্ষতিপূরন না দেওয়ায় তারা এ বন্দর ছেড়েছেন।

এদিকে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক কিছু আমদানি কারক জানান, বেশি লাভ জনক হওয়ায় সাম্প্রতি বেনাপোল বন্দরে বৈধ পণ্যের সাথে বিভিন্ন কৌশলে ভায়াগ্রা মত মাদক ঢুকছে। দু একটা চালান আটক করলেও অধিকাংশ চালান থাকছে ধরা ছোওয়ায় বাইরে। এসব দূনিতীবাজ ব্যবসায়ীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় না আনতে পারাই সাধারণ ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে  রয়েছে। এতে অনেক ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তার স্বাার্থে অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করছেন।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি স্বিকার করে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে  আমদানি বন্ধ ছিল।  এছাড়া পণ্য খালাসে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। এতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা লক্ষ্যমাত্র পূরনে আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জানা যায়, রাজস্ব আয়ের দিক থেকে চট্রগ্রাম বন্দরের পরেই বেনাপোল বন্দরের অবস্থান। প্রতিবছর এ বন্ধর দিয়ে ভারত থেকে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার পন্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আসতো।