বেগম জিয়ার কিছু হলে কী করবে বিএনপি?

 

বেগম জিয়ার কিছু হলে

কী করবে বিএনপি?

বিশেষ প্রতিনিধি

বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে। এছাড়া তার কিডনির জটিলতা বেড়েছে এবং ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন এসব ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়ার উচ্চ রক্তচাপ, ব্লাড প্রেসার অনিয়ন্ত্রিত। এরকম অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়ার দ্বিতীয়বারের মতো আবেদন করেছেন তার পরিবার। আইনমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার আবেদন বিবেচনায় কোনো সুযোগ নেই। তাকে যদি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হয় তাহলে তাকে আবার জেলে যেতে হবে। জেলে যেয়ে নতুন আবেদন করতে হবে। এর জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। একটি প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়েছেন তিনি।

বেগম খালেদা জিয়ার ইস্যুটি রাজনৈতিক নাকি চিকিৎসা সংক্রান্ত এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে ভিন্নমুখী আচরণ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে বিএনপি নেতারা মানবিক কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার কথা বলছেন। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার ইস্যুকে একটি রাজনৈতিক ইস্যু করার জন্য বিএনপি তৎপর। বিএনপি নেতারা প্রচ্ছন্নভাবে বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে দেশে বড় ধরনের আন্দোলন হবে এবং সরকারকে সেই চাপ সামলাতে হবে। আসলেই কি বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে বিএনপি আন্দোলন করতে পারবে বা সেরকম কিছু করার সক্ষমতা কি বিএনপির আদৌ আছে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতারাও বিভিন্ন মতামত দিচ্ছেন। বেগম খালেদা জিয়া প্রথম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০০৭ সালে। যখন ওয়ান-ইলেভেন সরকার আসে সেই সময় বিএনপি একটি মিছিল পর্যন্ত করতে পারে নি। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যখন দুটি দুর্নীতি মামলার রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে এলো তখন বিএনপি নেতারা হুমকি দিয়েছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে সারা বাংলাদেশ অচল করে দেয়া হবে। এমনকি যখন ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি যখন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত করা হলো এবং কারাগারে নেয়া হলো, তখনও বলা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা সম্ভব হবে না।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখলে সারাদেশে বিস্ফোরণ ছড়িয়ে পড়বে। বিস্ফোরণ তো দূরের কথা বিএনপি নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একটি শক্তপোক্ত আন্দোলনও করতে পারেননি। এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় কারাজীবনে বিএনপি না পেরেছে আইনগত ভাবে মোকাবেলা করতে, না পেরেছে রাজপথে আন্দোলন করতে। ফলে বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে বিএনপি আন্দোলন গড়ে তুলবে বা সরকারের পতন ঘটাবে এমন চিন্তা ভাবনা অলীক কল্পনা প্রসূত এবং বাস্তবতা বিবর্জিত বলেই বিএনপির অনেক নেতা মনে করেন। তবে বিএনপির কোন কোন নেতা মনে করেন যে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে বা তার কিছু হলে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।

বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে যে, সরকার অনেক বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়ে সফল হয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সেটি হবে কিনা তা বলার সময় এখনো হয়নি। তবে সরকার একটি বিষয়ে খুবই স্পষ্ট করেছে, তারা বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে আন্তরিক। আর এ কারনেই ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে তাকে কারাগার থেকে জামিন দেয়া হয়েছে এবং তিনি বাসায় অবস্থান করছেন। এই উদারতাটুকুও মূল্যায়ন করছে না বিএনপি। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপির নিশ্চয়ই একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে খালেদা জিয়ার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির জন্য বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে। আর বিএনপি নেতারা কি তাহলে সেটিই চাইছেন? খালেদা জিয়ার জীবনের বিনিময়ে সরকার পতনই কি তাহলে বিএনপির লক্ষ্য? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।