বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা দেড় বছর বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেয়া হয়েছে। করোনার সংক্রমণ কমে যাওয়া, শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার কঠোর শর্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতেও ফিরেছিল শিক্ষার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় হলে ফিরেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। সেখানে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রভোস্টের পদত্যাগসহ ৩ দফা দাবিতে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠি চার্জ এবং রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ ঘটনার জের ধরেই উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় শিক্ষকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহতের ঘটনার প্রতিবাদে দেশজুড়ে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ছড়াচ্ছে উত্তাপ। তারপরই আবার গতকাল পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দেয় পুলিশ। শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। দীর্ঘ সময় পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার শুরু থেকেই বিভিন্ন সঙ্কট ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক এ আন্দোলনে কোনো রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী ঢুকে আন্দোলনটিকে একটি রাজনৈতিক আন্দোলনের দিকে নিয়ে যায় কিনা, এ নিয়ে অনেকেই উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠায় ভুগছেন।

প্রচণ্ড শীতের মধ্যেই হঠাৎ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযের (শাবিপ্রবি) বেগম সিরাজুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা। শুরু করলেন বিক্ষোভ। হল থেকে বেরিয়ে এসে ক্যাম্পাসের গোলচত্বর এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। শতাধিক ছাত্রীর এই বিক্ষোভ দেখে হতভম্ব সবাই। কারণ, এর আগে কখনো এভাবে শাবিপ্রবিতে ছাত্রী বিক্ষোভ হয়নি। ছোট ঘটনা দিয়ে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ এখন বিস্ফোরণে রূপ নিয়েছে। শাবিপ্রবি প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষার্থীরা। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শাবিপ্রবির বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। তাদের দাবি, শাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে সরে যেতে হবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার জেরে এখন দেশের প্রায় প্রত্যেকটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ চলছে।

বিশেষ করে ভিসি ফরিদ উদ্দিনের অপসারণ দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ করেছে বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। তারা শাবি বন্ধের ঘোষণাকে অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। এমনকি রাজাকারদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনের লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) নির্মিত ঘৃণাস্তম্ভে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের কুশপুতুল টানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এ ছাড়া রোববার রাতেই বিক্ষোভ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বাইরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরকম পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যাতে কোনো সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতের মতো উগ্র দলগুলো ঢুকে না পড়ে সে ব্যাপারে সকলকের সজাগ থাকা এবং তীক্ষ্ণ নজর রাখা উচিত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্দোলন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সেটা তারা করতেই পারে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এজেন্ডা শিক্ষার সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। তরুণরা আন্দোলন না করলে আন্দোলন করবেটা কে? কিন্তু আমরা অতীতেও দেখেছি শিক্ষার্থীদের ওপর ভর করে সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী ফায়দা লুটাতে চেয়েছিল। বিশেষ করে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি-জামায়াত শিক্ষার্থীদের প্রায় প্রতিটি আন্দোলনেই ঢুকে গিয়ে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। এখন বিএনপি এমনিতেই রাজপথে আছে। ফলে শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক এ আন্দোলনে তাদের ঢুকে যাওয়ার শঙ্কাটা অমূলক নয়। গুরুতর জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে দ্বিতীয় কোনো এজেন্ডা তৈরির আগেই ছাত্রদের দাবির প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারা সবার জন্যই মঙ্গল। আর তাই এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীরাসহ সচেতন মহলের সবাইকেই নজর রাখতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।