বিদায় ফখরুল?

নিজস্ব প্রতিবেদক : নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে শুরু থেকেই বিএনপিতে দ্বন্দ্ব ছিল। এখন নির্বাচনে ভরাডুবির পর এই দ্বন্দ্ব ভাঙনের দিকেই নিয়ে যেতে পারে বিএনপিকে। নির্বাচনের এই ফলাফলের কারণে বলির পাঠা হতে পারেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মূলত ২৫ ডিসেম্বরের পর থেকেই বিএনপির মধ্যে নির্বাচন বর্জনের দাবি জোরালো হয়। দলের সিংহভাগ শীর্ষ নেতাই ছিলেন, নির্বাচন থেকে সরে এসে থাকার অবস্থান গ্রহণের পক্ষে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ অধিকাংশই নেতা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার জন্য প্রথমে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলেন। এরপর তারা লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ করেন। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচন বর্জনের ব্যাপারে তারেক দলের মহাসচিব এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলেন। এরা দুজনেই নির্বাচন বর্জন না করে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার পক্ষে মত দেন।

ড. কামাল হোসেন তারেক জিয়াকে আশ্বস্ত করেন যে, ৩০ ডিসেম্বর দেশে ভোট বিপ্লব হবে। এ নিয়ে দলের ভিতর মির্জা ফখরুলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ২৯ ডিসেম্বর চূড়ান্ত রূপ নেয়। বিএনপিতে মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ‘তারা আশা করেছিলেন, নির্বাচনে একটা সম্মানজনক ফলাফলের পর বিএনপি সাংগঠনিকভাবে নিজেদের গোছাবে। কিন্তু ভোটের দিন, বিএনপি মহাসচিবকে না জানিয়েই, দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই জামাতসহ বিএনপির অন্তত ৪৪ জন ভোট বর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও, বিএনপির শতাধিক প্রার্থী ভোটের মাঠ থেকে নীরবে কর্মীদের সরিয়ে নেয়।’

একটি সূত্র জানাচ্ছে, মির্জা ফখরুলকে বেকায়দায় ফেলতে তাকে না জানিয়েই লন্ডন থেকে তারেক জিয়া বিভিন্ন প্রার্থীকে টেলিফোন করে নির্বাচনী কার্যক্রম গুছিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। তাই ভোটের দিন দুপুর ১২টার পর অধিকাংশ আসনেই বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যায়। বিএনপির মহাসচিব বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন এই নীরব বর্জনের কথা কিছুই জানতেন না। বিএনপি যেন বিরোধী দলে না বসতে পারে এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যেন বিরোধী দলের নেতা না হতে পারেন। সেজন্যই এটা তারেক জিয়া করেছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গত কিছুদিন ধরেই তারেক জিয়াকে ছাপিয়ে মির্জা ফখরুল বেশি গ্রহণযোগ্য নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তারেক জিয়া মনে করেছেন, বিএনপি যদি ৭০/৮০ আসন পেয়েও বিরোধী দল হয়। তাহলে মির্জা ফখরুল জিয়া পরিবারকে মাইনাস করবে। তাই তারেক জিয়া ভোটে এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন। যাতে বিএনপি কিছুতেই সংসদে যেতে পারবে না। এরফলে বিএনপিতে মির্জা ফখরুল কোনঠাসা হয়ে পড়বেন। আর আবার প্রতিষ্ঠিত হবে তারেক জিয়ার রাজত্ব। তাহলে কি বলতেই হচ্ছে বিদায় ফখরুল?

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ফখরুলের বিদায় মুহূর্তই হয়তো তৈরী করলো।