বিতর্কিত সাংবাদিক থেকে যেভাবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

Foreign Secretary Boris Johnson arrives for the last day of the Conservative Party Conference at the Manchester Central Convention Complex in Manchester.


অনলাইন ডেক্স : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেছেন বরিস জনসন। নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে চলেছেন। দেড় যুগের সাংবাদিকতা আর রাজনৈতিক জীবনে নানা উত্থান-পতনের পর এ পদে আসীন হচ্ছেন তিনি। মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি তাদের নতুন প্রধান হিসেবে ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে।জন্ম ও বেড়ে ওঠা:ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সাবেক কনজারভেটিভ সংসদ সদস্য স্ট্যানলি জনসন ও তার প্রথম স্ত্রী চিত্রকর শার্লট ফসেটের সন্তান আলেক্সান্ডার বরিস দে পিফেল জনসন ১৯৬৪ সালের জুন মাসে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন।চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় জনসনের শৈশব কেটেছে নিউইয়র্ক, লন্ডন ও ব্রাসেলসে। একসময় বধির ছিলেন তিনি। যে কারণে শৈশবেই তাকে বেশ কয়েকবার অপারেশনের টেবিলে যেতে হয়েছিল। জনসন সে সময় তুলনামূলক চুপচাপ ছিলেন বলে তার আত্মীয়স্বজন জানিয়েছে।


কিং স্কলারশিপে বার্কশায়ারের ইটন কলেজে পড়ার পর অক্সফোর্ডের বেলিওল কলেজে ক্ল্যাসিকসে ডিগ্রি নেন জনসন। তিনি বিতর্ক সংগঠন অক্সফোর্ড ইউনিয়নেরও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ছিলেন বুলিনডং ক্লাবের সদস্য, যেখানে তার সঙ্গী ছিলেন ডেভিড ক্যামেরনও।
জনসন প্রথমে ১৯৮৭ সালে অ্যালেগ্রা মস্টিন ওয়েনকে বিয়ে করলেও তাদের সংসার বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৯৩ সালে জনসন আইনজীবী মেরিনা হুইলারের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন। জনসনের ৪ সন্তানের মা-ই মেরিনা। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা জনসন। দুই যুগ পর গত বছর এ দম্পতি বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন।প্রবন্ধ সংকলন লেন্ড মি ইউর ইয়ারস ছাড়াও জনসন উপন্যাস সেভেন্টি টু ভার্জিনস ও রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাস নিয়ে দ্য ড্রিম অব রোম লিখেছেন। ২০১৪ সালে ঝুলিতে যুক্ত করেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে নিয়ে লেখা দ্য চার্চিল ফ্যাক্টর: হাউ ওয়ান ম্যান মেইড হিস্টরি বইটিও। যেভাবে শুরু করেন সাংবাদিকতার জীবন:১৯৮৭ সালে টাইমসে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেয়ার পর একজনের উদ্ধৃতি জাল করায় চাকরি হারাতে হয় তাকে। ডেইলি টেলিগ্রাফে জনসন ইউরোপবিষয়ক সংবাদদাতা ছিলেন ৫ বছর। পরে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।


১৯৯৪ সাল থেকেই জনসন ম্যাগাজিন দ্য স্পেকটেটরে রাজনৈতিক কলাম লেখা শুরু করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি ম্যাগাজিনটির সম্পাদক হন। এ দায়িত্বে তিনি ছিলেন ২০০৫ পর্যন্ত।
টেলিগ্রাফে থাকার সময়ই ১৯৯৭ সালে ক্লয়েড সাউথ এলাকা থেকে কনজারভেটিভ প্রার্থী হিসেবে হাউস অব কমন্স নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন জনসন। সেবার লেবার পার্টির মার্টিন জোন্সের কাছে পরাজিত হন তিনি।
১৯৯৮ থেকে জনসনকে বিবিসির হ্যাভ আই গট নিউজ ফর ইউ সহ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনসনকে দেখা যেত। বিব্রতভাব এবং মাঝে মাঝেই উল্টোপাল্টা মন্তব্যের কারণে তিনি টক শো’র জনপ্রিয় মুখে পরিণত হন।
রাজনীতির ব্যর্থতা ও সফলতা: ২০০১ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে হেনলি অন টেমস আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন এ কনজারভেটিভ সদস্য। টেলিভিশন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত হলেও জনসনের রাজনৈতিক উত্থান মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।
স্পেকটেটরের একটি সম্পাদকীয় প্রকাশের জেরে তাকে লিভারপুল শহরের কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। এক সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনে ছায়া শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকেও তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য এর কোনোটাই ২০০৫ এর নির্বাচনে তার ফের জয়ী হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
দুই বছর লন্ডনের মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অপরাধ দূর ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বাজিমাত করেন জনসন। সেবার লেবারের কেন লিভিংস্টোনকে সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে তিনি যুক্তরাজ্যের রাজধানীতে রক্ষণশীলদের অভাবিত জয় এনে দিয়েছিলেন।
২০১২ সালের নির্বাচনে ফের লিভিংস্টোনকে হারিয়ে দলকে দিয়েছিলেন স্বস্তি। ফের ২০১৫ সালে পশ্চিম লন্ডনের উক্সব্রিজ অ্যান্ড সাউথ রুইস্লিপ আসনে জয়ী হয়ে ফের পার্লামেন্টে ঢোকেন জনসন।লন্ডনের পরের মেয়র নির্বাচনে আর দাঁড়াননি জনসন। তার বদলে থাকা কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীকে হারিয়ে শহরটির মেয়র পদে নির্বাচিত হন সাদিক খান।মেয়রের দায়িত্ব ছাড়ার আগেই জনসন হয়ে ওঠেন যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়ার পক্ষে থাকা অন্যতম প্রভাবশালী প্রচারক। ইউরোপকে এক করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চেষ্টাকে নেপোলিওন ওয়ান ও অ্যাডলফ হিটলারের চেষ্টার সঙ্গে তুলনা করে বেশ সমালোচিতও হন তিনি।তেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি জনসনকে তার মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব দেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুনে অনুষ্ঠিত আগাম নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর মের সংখ্যালঘু সরকারের মন্ত্রিসভায়ও জনসনের পদ বহাল থাকে।