বিজিবিতে যোগদেয়ার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাগেল আরফিনা

মোস্তাফিজুর রহমান লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার মেয়ে আরফিনা চাকরিতে যোগদেয়ার যাওয়ার সময় তার মাকে বলেছিল ‘মা তোমার আর কষ্ট করতে হবে না, আমি বিজিবিতে যোগ দিলে আর সংসারে অভাব থাকবেনা। তুমি আমার জন্য চিন্তা কর না মা’ এভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়ের কথা গুলো বলছেন আর কাঁদছেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আরফিনার মা মফিনা বেগম।সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বাবা হারা আরফিনা খাতুন অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। শিক্ষা বৃত্তির টাকায় পাড়লেখা চালিয়ে গেছেন। গত জানুয়ারী মাসে বিজিবিতে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন আরফিনা। গতকাল সোমবার বোনের দেবরের মটর সাইকেলে রংপুর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সেক্টারে যোগদানপত্র নেয়ার জন্য রংপুর যাওয়া পথে সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ হারায় সে। আরফিনার আগামী ০২ এপ্রিলে বিজিবিতে যোগদান করার কথা ছিল।বিজিবিতে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মাকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখছিল আরফিনা। কিন্তু একটি ঘাতক ট্রাক এক নিমিষেই প্রাণ কেড়ে নিল। মুহুর্তেই যেন সকল স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেল তাদের পরিবারের। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আরফিনা খাতুনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে গত সোমবার (১৬ মাচর্) রংপুর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সেক্টারে যোগদানপত্র নেয়ার জন্য রংপুর পাগলাপীর এলাকায় ট্রাকের সাথে মটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন অদম্য মেধাবী আরফিনা খাতুন (২০)।এ সময় তার বোনের দেবর মটরসাইকেল চালক মোঃ রাশেদ মিয়া (২২) গুরতর আহত হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয়রা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।জানা গেছে, লালমনিরহাটে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পশ্চিম সাড়ডুবী গ্রামে মৃত দিনমজুর আব্দুল মজিদের মেয়ে অদম্য মেধাবী আরফিনা খাতুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবিতে নির্বাচিত হন। বাবার মৃত্যুর পরও অদম্য মেধাবী আরফিনা খাতুন এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতেও কৃতিত্বপূর্ন ফলাফল করে। শত কষ্ট আর অভাব অনটনের মাঝেও সে তার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার প্রয়াসে অনড় ছিল। আরফিনা খাতুন এক ভাই তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয়।বর্তমানে সে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন সরকারি কলেজে উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। আরফিনা খাতুন বিভিন্ন বে-সরকারী ব্যাংক খেকে শিক্ষা বৃত্তি নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন।প্রায় ১০ বছর পুুর্বে আরফিনার বাবার মৃত্যুর পর অভাবের সংসারে তার মা বিভিন্ন সময় মানুষের বাড়িতে কাজ করে চার ভাই-বোনকে লেখাপড়া চালাতে সহযোগিতা করতেন। বর্তমানে তার মা বেসরকারী সংগঠন স্বপ্ন প্রকল্প নামের একটি প্রকল্পে দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কর্মী হিসেবে কাজ করেন।বিজিবির নিয়োগ পরীক্ষায় সে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হল। পরিবারে যেন আনন্দের বন্যা নেমে এল যে এবার হয়তো আর তার মাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হবেনা, আর ভাইবোনদের না খেয়ে থাকতে হবেনা।
স্থানীয় মকবুলার রহমান মিঠু বলেন, আরফিনা খুই মেধাবী ও পরিশ্রমী ছিল। অনেক কষ্ট করে পড়া লেখা চালিয়ে গেছে। বিজিবিতে সে চুড়ান্ত ভাবে নির্বাচিত হলে নিয়োগ পত্র আনেতে গিয়ে তার অকাল মৃত্যু হয়।বড়খাতা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা জামাল সোহেল ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,আরফিনা আমার কাজ থেকে নাগরিক সনদপত্র নিতে এসেছিলো তার মৃত্যুতে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি ওমর ফারুক বলেন, আমি বড়খাতা ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খবরটি জানতে পেয়েছি।