বিএনপির শঙ্কা: টাকা খেয়ে নির্বাচনে যেতে পারেন তারেক

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিতে তারেককে নিয়ে শঙ্কা, উৎকণ্ঠা এবং ধুম্রজাল বাড়ছে। বিশেষ করে বিএনপি যতই আন্দোলনমুখী হচ্ছে, যতই বিএনপির সমাবেশ গুলো সাফল্যের মুখ দেখছে ততই বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এই শঙ্কা অন্য কিছু নয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে। বিএনপির তৃণমূল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা সবাই জানেন যে, টাকা কাছে বশীভূত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। লন্ডনের পলাতক এই বিএনপির নেতা বিলাসী জীবন যাপন করেন এবং তার বিলাসী জীবনযাপনের উৎস হলো দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা, কমিটি বাণিজ্য করা এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভবিষ্যতে তাদের দিকে দেখবেন এমন আশ্বাস দিয়ে চাঁদাবাজি করা। আর এভাবেই লন্ডনে মধ্যপ্রাচ্যের রাজা-বাদশাদের মতো জীবনযাপন করছেন তারেক জিয়া। আর এটাই বিএনপির নেতাকর্মীদের ভয়। বিএনপির একজন নেতা বলছিলেন যে, তারেক জিয়া কষ্ট করেননি, তিনি জেল জুলুম খাটেননি। এমন কি আমাদের মত তিন দিন ধরে সমাবেশস্থলে অপেক্ষাও করেননি। কাজেই তিনি এই কষ্টগুলো বুঝবেন না। তিনি লন্ডনে আরাম-আয়েশে জীবন-যাপন করছেন। তিনি যদি মনে করেন যে
তার টাকা দরকার হবে, তখন তিনি টাকার জন্য নির্বাচনে চলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ওই নেতা ২০১৮ উদারহণ দিয়ে বলেছেন, ২০১৮ নির্বাচনে যেতে তারেক জিয়ার রাজি হয়েছিলেন শুধুমাত্র টাকার জন্য। ওই সময় ব্যবসায়ীরা বিএনপিকে টাকা দিচ্ছিলেন না, কমিটি করেও টাকার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমন একটি পরিস্থিতিতে তারেক জিয়া নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিএনপির অন্য একজন নেতা বলেছেন, ঢাকায় আবদুল আওয়াল মিন্টু, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর মাধ্যমে ২০১৮ নির্বাচনের মনোনয়ন বাণিজ্য করেছিলেন তারেক জিয়া। ওই নির্বাচনে বিএনপি জিততে যায়নি। মূলত তারেক জিয়ার পকেট ভারী করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি অবশ্য পাল্টে গেছে। অনেক ব্যবসায়ীরাই বিএনপিকে গোপনে টাকা দিচ্ছেন। লন্ডনে নব্য হাওয়া ভবনের সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী গোপনে যোগাযোগ করছেন এবং সেখানে টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। তাছাড়া তারেক জিয়া বিএনপির বিভিন্ন কমিটি করেও বিপুল টাকা পয়সার মালিক হয়েছেন। কিন্তু বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রবীণ নেতা বলেছেন, টাকার লোভ যার থাকে তিনি সব সময় টাকাই খোঁজেন। কাজেই তারেক জিয়া নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের লোভ করবেন না এটা খুবই অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা ঘটবে।

তারেক জিয়া ৩০০ আসনে যদি মনোনয়ন দিতে পারেন তাহলে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হবেন। সেই লোভ তিনি সংবরণ করতে পারবেন কিনা এটাই বিএনপির আন্দোলনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে দেখা গেছে তারা আন্দোলন নিয়ে সবচেয়ে শঙ্কায় আছেন তারেক জিয়ার ভূমিকা নিয়ে। তারেক জিয়া ক্ষণে ক্ষণে রং বদলান। কখনো তিনি বলেন যে, সরকারকে ফেলে দিতে হবে। আবার কখনো তিনি বলেন আস্তে আস্তে আন্দোলন করতে হবে, এখনই চূড়ান্ত কিছু নয়। উদাহরণ দিয়ে বিএনপির একজন নেতা বলেন, আমানউল্লাহ আমানের সঙ্গে যখন তারেক জিয়ার কথা হয়, তখন আমানউল্লাহ আমানকে তিনি বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকা অচল করে দেওয়া হবে। হেফাজত কায়দায় ঢাকার সব সড়ক বন্ধ করে সরকারকে ফেলে দেওয়া হবে। তারেক জিয়ার বক্তব্যে উদ্বেলিত হয়েই আমানউল্লাহ আমান ১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার কথা দেশ চলবে এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার তারেক জিয়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বলেছেন, ১০ ডিসেম্বর শুধুমাত্র একটি সমাবেশ হবে, অন্য কোন কিছু না। এই সমাবেশের পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, স্পষ্ট তারেক জিয়া সরকারের সাথে বার্গেনিং করতে চাইছেন এবং নির্বাচনের জন্য দরকষাকষির রেট বাড়াতে চাচ্ছেন। বিএনপির কেউ কেউ মনে করেন যে, তারেক জিয়াকে সরকারও টাকা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে নামাতে পারেন। টাকার কাছে অসহায় হয়ে যাওয়া তারেক জিয়ার শেষ পর্যন্ত কি করবে এটাই বিএনপির জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।