বাংলাদেশের হতাশার দিন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নাঈম শেখ-মুশফিকুর রহিমের জোড়া ফিফটিতে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ, জেগেছিল জেতার আশা। রান তাড়ায় চারিথ আসালাঙ্কার উড়ন্ত সূচনার পর জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু আসালাঙ্কাকে আটকানো গেল না। তার সঙ্গে মিলে ঝড় তোলেন ভানুকা রাজাপাকসে। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এই দুজনের  ক্যাচই ফসকে গেল লিটন দাসের হাত থেকে। সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর দল পুড়ল স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায়।

 

রোববার শারজায় বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের করা ১৭১ রান ৭ বল আগেই পেরিয়ে যায় লঙ্কানরা।

 

দলকে জেতাতে মাত্র ৪৯ বলে ৫ চার, ৫ ছক্কায় ৮০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন আসালাঙ্কা। ৩১ বলে ৫৩ করে যান রাজাপাকসে। এই দুজনেরই ক্যাচ ছাড়েন লিটন।

 

১৪ রানে আফিফ হোসেনের বলে বাউন্ডারি লাইনে ১৪ রানে থাকা রাজাপাকসের ক্যাচ ছাড়েন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ৬৩ রানে থাকা আসালাঙ্কার ক্যাচও ফসকে যায় তার হাত থেকে।  দারুণ ব্যাট করতে থাকা লঙ্কানদের আর থামানো যায়নি।

 

অথচ রান তাড়ায় নামা লঙ্কান ইনিংসে শুরুতেই আঘাত হেনেছিলেন একাদশে আসা নাসুম আহমেদ। তার চতুর্থ বলেই ঘোরাতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান কুসল পেরেরা।

 

এই চাপ সামলে এরপরই উড়ন্ত শুরু পায় লঙ্কানরা। তিনে নেম ঝড় তুলেন চারিথা আসালাঙ্কা। নাসুমকে পরের ওভারে দুই ছক্কায় উড়ান তিনি।

 

পাথুম নিশানকাকে নিয়ে পাওয়ার প্লেতে এনে দেন জুতসই শুরু। নিশানকা শেখ মেহেদীকে উড়ান চার-ছক্কায়। পাওয়ার প্লেতে আসে ৫৪ রান। পাওয়ার প্লের পর বল করতে আসা মোস্তাফিজুর রহমানকেও দুই চার মারেন আসালাঙ্কা। তার ওভার থেকে আসে ১৩ রান।

 

নবম ওভারে উড়তে থাকা শ্রীলঙ্কার ডানা কাটেন সাকিব। দারুণ খেলতে থাকা নিশানকা হয়ে যান বোল্ড। ওই ওভারেই আবিস্কা ফার্নেন্দো সাকিবের ভেতরে ঢোকা বলে খোয়ান স্টাম্প। ওই ওভারে জোড়া উইকেট নিয়ে মাত্র ১ রান দেন সাকিব।

 

দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসে বাংলাদেশ। পরের ওভারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকে মারতে গিয়ে ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় নেন ভানিন্দু হাসারাঙ্গা। ম্যাচ থেকে তখনই ছিটকে পড়ার শঙ্কায় ছিল তারা।

কিন্তু আসালাঙ্কা দলকে রাখেন ম্যাচে, তার সঙ্গে মিলে জুটি গড়েন রাজাপাকসে। নিয়মিত বোলাররা মার খাওয়ায় অনিয়মিত বোলার আক্রমণে এনেছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

তিনি নিজে করেন ২ ওভার, আফিফ করেন ১ ওভার। এই ৩ ওভার থেকে ৩৬ রান নিয়ে নেন শ্রীলঙ্কা।

অবশ্য ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যাবে লিটনের ক্যাচ ফেলাই। ওই সময় রাজাপাকসে আউট হলে চাপ বাড়াতে পারত বাংলাদেশ। আসালাঙ্কাও সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাচ ফসকে যাওয়ায় আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি।

পঞ্চম উইকেটে ৫২ বলে ৮৬ রানের এক জুটিই ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয় বাংলাদেশকে।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক শুরু করেন নাঈম-শেখ লিটন দাস। শুরুর সময়টা সামলে পাওয়ার প্লেতে জুতসই রান এনে ফেলেছিলেন তারা। দুই চারে লিটনও থিতু হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু লাহিরু কুমারাকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন।

 

তিনে নেমে সাকিব অনিয়মিত অফ স্পিনার চারিথা আসালাঙ্কার বলে মেরেছিলেন দুই চার। এরপর চামিকা করুনারত্নের ব্যাক অফ দ্য হেন্ড বল পড়তে না পেরে হয়ে যান বোল্ড। ভালো শুরুর পর ৫৬ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এরপর দারুণ এক জুটিতে খেলার ছবি আবার বদলে দেন নাঈম-মুশফিক। নিজেকে হারিয়ে খোঁজা মুশফিক এদিন ছিলেন অন্য মেজাজে। লেগ স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে স্লগ সুইপে ছক্কা মারার পর একইভাবে উড়ান বাঁহাতি পেসার বিনুরা ফার্নেন্ডোকেও। দেন বড় কিছুর আভাস।

তার সঙ্গে মিলে এক, এক করে রান বাড়িয়ে জুটি বাড়াতে থাকেন নাঈম। ৪৪ বলে তুলে নেন টুর্নামেন্টে নিজের দ্বিতীয় ফিফটি।

হাসারাঙ্গা পরের স্পেলে ফিরতে তাকে আবার এলোমেলো করে দেন মুশফিক। তৃতীয় উইকেটে তাদের জুটিতে আসে ৫১ বলে ৭৩ রান।

৬ চারে ৫২ বলে ৬২ করে বিনুরার বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন নাঈম। মুশফিক চালিয়ে যান। ৩২ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। লম্বা খরা কাটিয়ে ১১ ইনিংস পর তিনি পেলেন ফিফটি। সর্বশেষ ২৮ ইনিংসে এটি কেবল তার দ্বিতীয় ফিফটি।

পাঁচে নেমে আফিফ হোসেন তেমন কিছু করতে না পারলেও অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ৫ বলে ১০ করলে ১৭০ ছাড়িয়ে যায় দলের পূঁজি। রানে ভরা উইকেটে সেই রানও পরে আর যথেষ্ট হয়নি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৭১/ ৪   (নাঈম  ৬২, লিটন ১৬, সাকিব ১০, মুশফিক ৫৭*, আফিফ ৭, মাহমুদউল্লাহ ১০*  ; করুনারত্নে ১/১২ , বিনুরা ১/২৭, চামিরা ০/৪১, কুমারা ১/২৯, আসালাঙ্কা ০/১৪, হাসারাঙ্গা ০/২৯, শানাকা ০/১৪ )

 

শ্রীলঙ্কা: ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫   (পেরেরা ১, নিশানকা ২৪,  আসালাঙ্কা ৮০* , আবিস্কা ০, হাসারাঙ্গা ৬ , রাজাপাকসে ৫৩, দাসুন ১* ;  নাসুম ২/২৯, শেখ মেহেদী ০/৩০,  সাইদুদ্দিন ১/৩৮, সাকিব ২/১৭ , মোস্তাফিজ ০/২২ ,মাহমুদউল্লাহ ০/২১, আফিফ ০/১৫)

 

ফল: শ্রীলঙ্কা ৫ উইকেটে জয়ী।

 

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: চারিথা আসালাঙ্কা।