বাংলাদেশকে চাপে ফেলাতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘লেহি আইন’?

এই আমার দেশ ডেস্ক

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে ‘লেহি আইন’ কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে আগ্রহী দেশকে প্রাপ্ত অর্থ কোথায় ব্যয় হয় তা জানানোর শর্ত মেনেই চুক্তি করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এই লেহি আইন।

লেহি আইন যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটি আইন যেটির মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত সংস্থাগুলোর সহায়তাকে সীমাবদ্ধ করা হয়। এই ধারাটি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স থেকে অন্যান্য দেশের জন্য সহায়তা সংক্রান্ত কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করে। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং ধর্ষণকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মূলত বিদেশের কোনো নিরাপত্তা সংস্থা বা বাহিনী নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও ধর্ষণসহ ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকলে ওই সংস্থা বা বাহিনীকে ওই ধারার আওতায় অনুদান দেওয়া বন্ধ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়ে দেয়, লেহি আইনের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী মার্কিন অনুদান অব্যাহত রাখতে চাইলে সকল শর্ত মেনেই নতুন চুক্তি সই করতে হবে বাংলাদেশকে।

যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশোধিত আইন অনুযায়ী চুক্তির জন্য বাংলাদেশকে সময় বেঁধে দিলেও পরে বাংলাদেশের অনুরোধে ওই সময়সীমা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই আইন কার্যকর হলেও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে চূড়ান্ত মতামত জানায়নি। মার্কিন কূটনৈতিক সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী দুই পক্ষের কূটনৈতিক চ্যানেলে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ফলে লেহি আইনের আওতায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য অনুদান এখনো অব্যাহত আছে।

লেহি আইনের আওতায় সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ অনেক আগে থেকেই সম্মত রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসের এক কর্মকর্তা । আইনটিতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা খুবই সামান্য এবং পরিধিও সীমিত। বাংলাদেশ মতামত জানাতে সময় নিলে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও নিরাপত্তা সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে বলেও জানান তিনি।

গত বছর ৯ ও ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সামিট ফর ডেমোক্রেসি অর্থাৎ গণতন্ত্র সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল এবং মালদ্বীপকে আমন্ত্রণ করা হলেও, আমন্ত্রিত ছিল না বাংলাদেশ। এর পরই আসে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের এই লেহি আইন কেবলমাত্র বাংলাদেশের উপর আবারো চাপ প্রয়োগের নতুন হাতিয়ার কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।