বরগুনায় মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী ও রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ (১৪জুলাই) রোববার বেলা ১১টার দিকে ‘বরগুনার সর্বস্তরের জনগণ’ ব্যানারে বরগুনা প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এ মানববন্ধন করা হয়।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ, চাচা আবদুল আজীজ শরীফ, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুনাম দেবনাথ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মারুফ মৃধা প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা মিন্নিকে রিফাত হত্যার নেপথ্যের নায়িকা উল্লেখ করে তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

এর আগে একই দাবিতে গতকাল শনিবার রাতে বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। ওই সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তাঁর বড় ভাই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ শরীফ ও মেজ ভাই আবদুস সালাম শরীফ।

ওই সময় রিফাত শরীফকে কুপিয়ে খুন করার ঘটনায় পুত্রবধূ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে দায়ী করেছেন রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। মিন্নিকে গ্রেপ্তার করার দাবিও জানিয়েছেন তিনি।

দুলাল শরীফ বলেন, ‘কুখ্যাত সন্ত্রাসী নয়ন বন্ডের সঙ্গে বিয়ের ঘটনা মিন্নি ও তাঁর পরিবার সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও মিন্নি নয়নের বাসায় যাওয়া আসাসহ নিয়মিত যোগাযোগ করত। একই ধারাবাহিকতায় রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার আগের দিন সকাল ৯টায় এবং সন্ধ্যায় মিন্নি নয়নের বাসায় যায়। মিন্নি অন্যান্য দিন রিফাতকে ছাড়াই কলেজে গেলেও ঘটনার দিন রিফাতকে সঙ্গে নিয়ে কলেজে যায়। ঘটনার দিন রিফাত কলেজ থেকে মিন্নিকে নিয়ে আসতে চাইলেও মিন্নি তাঁর সঙ্গে না গিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে।’

দুলাল শরীফ আরো বলেন, ‘রিফাত শরীফ যখন আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় একা একা রিকশায় করে হাসপাতালে যাচ্ছিল, তখন মিন্নি তাঁর ব্যাগ ও স্যান্ডেল গোছানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত ছিল। এ ছাড়া আসামিদের একজন রাস্তা থেকে ব্যাগ তুলে মিন্নির হাতে দেয়। রিফাত শরীফকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও মিন্নি রিফাতের সঙ্গে যায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রশাসনের কাছে দুলাল শরীফ দাবি জানান, পুলিশ মিন্নিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

তবে ‘এ মামলার বাদী হিসেবে মিন্নিকে এক নম্বর স্বাক্ষী তো আপনিই করেছেন’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বলেন, ‘তখন আমরা জানতাম না যে, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির বিয়ে হয়েছিল। জানতাম না যে, নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল।’

এ বিষয়ে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি কথা বলতে রাজি হননি। তবে এ বিষয়ে তাঁর বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘মিন্নির সঙ্গে নয়নের কখনোই বিয়ে হয়নি। তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও ছিল না। মিন্নির বিয়ে হয়েছে একমাত্র রিফাত শরীফের সঙ্গেই।’

মিন্নির বাবা বলেন, ‘অস্ত্রের মুখে মিন্নির কাছ থেকে একবার একটা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছিল নয়ন বন্ড।’ তখন এ বিষয়ে পুলিশকে জানিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কি না— এমন প্রশ্নের উত্তরে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘না, তখন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরো জানান, রিফাত শরীফকে যেদিন বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়, সেদিন তিনি নিজে রিফাতের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে গেছেন। সেদিন রিফাতের লাশ ময়নাতদন্তের সময় রিফাতের সঙ্গে থাকা বন্ধুরা তাঁর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এমনকি তাঁর ওপর চড়াও হন। সেই বন্ধুরাই রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফকে দিয়ে এসব করাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

মোজাম্মেল আরো বলেন, ‘রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফের হৃদযন্ত্রে রিং পরানো আছে। তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ, তাই তাঁর কথার কোনো ভিত্তি নেই। মিন্নি দোষী না অপরাধী, তা পুলিশের তদন্তেই বেরিয়ে আসবে।’