বনের কাঠ দিয়ে ঘাটাইলে ইট পোড়ানো হচ্ছে

সৈয়দ মিঠুন ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার প্রায় সব ইটভাটাই জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে স্থাপন করা। নিয়মানুসারে এসব ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা ব্যবহার করার কথা। কিন্তু লোক দেখানোর জন্য কিছু কয়লা ভাটার পাশে রাখা হলেও এর আড়ালে ইট পোড়ানো হচ্ছে কাঠ দিয়ে। প্রকাশ্যে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে এমন ১২টি ভাটার তথ্য খোদ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতি প্রায় সপ্তাহখানেক আগে ইউএনওর কাছে লিখিতভাবে জানায়। এরপরও ভাটাগুলোতে কাঠের স্তূপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ঘাটাইলে মোট ইটভাটার সংখ্যা ৫৩টি। অধিকাংশ ভাটারই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। ইটভাটা মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সচল, লিটন, নাঈম, সততা, কেএসবি, বিশাল, কনক, মিশাল, স্বর্ণ-১, স্বর্ণা-২, আরএসএম ও তিনতারা নামে ১২টি ভাটা প্রকাশ্যে ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করছে।
সরেজমিন উপজেলা সদর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ঘাটাইল সদর ইউনিয়নে অবস্থিত সচল ও কেএসবি ইটভাটায় দেখা যায়, জ্বালানি কাঠের স্তূপ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার একজন মালিক জানান, প্রতি ভাটায় ইট পোড়াতে দিন-রাতে প্রায় ২০০ মণ জ্বালানি কাঠের দরকার হয়। আইন অনুযায়ী জ্বালানি কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এরপরও অবাদে চলছে এ কাজ।
গতকাল শনিবার পর্যন্ত খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি টন কয়লা কিনতে খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে জ্বালানি কাঠে খরচ টনপ্রতি মাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকা। কয়লার দাম বেশি হওয়ায় কাঠ দিয়ে চাহিদা মেটাচ্ছে ভাটাগুলো। এ ক্ষেত্রে বনজ কাঠের ব্যবহারই বেশি হচ্ছে।
ঘাটাইলে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। মূলত পাহাড়কে কেন্দ্র করে বন গড়ে উঠেছে। এখানে রয়েছে সামাজিক ও সংরক্ষিত বনের প্রচুর গাছ। পাহাড়ি এলাকার মানুষ জানায়, প্রতি রাতেই ট্রাক ভরে বনের কাঠ যায় ইটের ভাটায়। তাদের শঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে বন।
অবৈধভাবে বনের কাঠ পোড়ানোর তথ্য নেই বন বিভাগের ঘাটাইল ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলামের কাছে। তিনি বলেন, তথ্য পেলে অবশ্যই ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘাটাইল ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান বলেন, নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই ইটভাটা মালিক সমিতি প্রায় সপ্তাহখানেক আগে কাঠ দিয়ে যেসব ভাটা ইট পোড়াচ্ছে, তাদের তালিকা ইউএনওর কাছে জমা দেয়। প্রশাসন ওই ধরনের ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা তা তার জানা নেই বলে জানান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ বলেন, ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে, ইট পোড়ানোর ক্ষেত্রে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার বেআইনি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে।
টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, আইন অনুযায়ী ইট পোড়াতে জ্বালানি কাঠের ব্যবহার নিষিদ্ধ। তালিকা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘাটাইলের ইউএনও মো. সোহাগ হোসেন বলেন, কাঠ পোড়ানো সম্পূর্ণ নিষেধ। যে ভাটাগুলো কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে সেই ভাটার মালিকদের নিয়ে এরই মধ্যে সভা করে সরকারের বিধি-নিষেধ তাদের স্মরণ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ এ কাজ করে তবে ভ্রম্যমাণ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হবে।