বছরের ৩৭ দিন পেরিয়ে গেলেও নতুন বই পায়নি দামুড়হুদা উপজেলার নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা

আবিদ হাসান রিফাত

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনাসহ আশপাশের এলাকার স্কুলগুলোতে নবম শ্রেনীর ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে নতুন বই এখনো বিতরণ করতে পারেনি মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ।

প্রতিবছর নতুন বছরের শুরুতে সকল ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মহামারি করোনায় সারাদেশ যখন স্থবির তখন এসময় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও বই ছাপানোর টেন্ডার জটিলতা সহ নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছে নতুন বই প্রকাশনায়। এরই ধারাবাহিকতায় দর্শনার ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনী থেকে অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মাসব্যাপী ধাপে ধাপে বই বিতরন সম্পন্ন হলেও নবম শ্রেনীর কোন বই এখনও বিতরণ করতে পারেনি শিক্ষা বিভাগ।

এতে অভিভাবকরা পরেছেন ছেলে মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায়। বই না পেয়ে ছেলে মেয়েরা আসক্ত হচ্ছে মোবাইল ফোনের অনলাইন গেমসগুলোতো।

অন্যদিকে একমাস অতিবাহিত হলেও ভালো শিক্ষার্থীরা এখনো বই না পেয়ে শুরু করতে পারছে না তাদের পড়াশোনা।

নবম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন বলেন, আমি স্কুল থেকে নতুন বই না পেয়ে এখনো পড়াশোনা শুরুই করতে পারিনি। কোচিংএ ও ভর্তি হতে পারছি না। আবার কিছুদিন পরেই স্কুল খুলেই যদি পরীক্ষা দিয়ে দেই তখন সিলেবাস অনুযায়ী পড়া শেষ না করতে পেরে খারাপ রেজাল্ট করতে হবে।

আরেক ছাত্র দেব বিশ্বাস জানায়, করোনায় স্কুল বন্ধ। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে নতুন বই স্কুল থেকে পেলেও এবছর ব্যাতিক্রম। ফেব্রুয়ারী মাসের ৫ তারিখেও বই পেলাম না। নতুন বই পেলে আমাদের পড়ার একটা ইচ্ছে থাকে। মা বাবা পড়তে বসতে বলার আগেই নিজে নিজেই পড়তে বসে যেতাম। নতুন পাতাগুলো উল্টে পাল্টে পড়তাম। বই না পেয়ে খেলাধুলা করে ও মোবাইলে গেমস খেলে সময় কাটাই।

অভিভাবক মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, বই না পেয়ে ছেলে পড়তেই বসে না। আগে আমরা বই না পেলে গ্রামার বই পড়তাম। গতবছর লকডাউনে স্যাররা বললেন অনলাইনে ক্লাস করতে হবে ছেলেকে দিলাম মোবাইল কিনে। বই না পেয়ে এখন ছেলে সারাদিন মোবাইল গেমস খেলে।

দর্শনা গার্লস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, নবম শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে এখনো আমরা বই বিতরন করতে পারি নাই। অনেক ছাত্রছাত্রীর মা-বাবা মোবাইলে ফোন দিয়ে বই কবে দেবে জানতে চাচ্ছে আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করছি। শিক্ষা অফিস বই স্কুলে পাঠালেই পরদিনই বই বিতরন করে দিব।

দর্শনা কেরুজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, আমরা প্রতিনিয়তই উপজেলা শিক্ষা অফিসের সাথে যোগাযোগ করছি তারাও জানাচ্ছে দ্রুতই বই পৌছে যাবে, তবে কবে পৌছাবে সেই তারিখ নিদিষ্ট করে কেউই বলতে পারছে না।

অনেক অভিভাবক স্কুলে এসে আবার মোবাইলে ফোন করে বই কবে দিব জানতে চাই আমাদের কাছে। বই না পেয়ে ছাত্রছাত্রীরা একদিকে অমনোযোগী হয়ে পড়ছে আবার আসক্ত হচ্ছে মোবাইল ফোনের গেমসে ফলে শিক্ষক বা অভিভাবকরা কেউই তাদেরকে মোবাইল গেমস থেকে দূরে রাখতে পরছি না।

দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল মতিন জানান, করোনার কারণে ও টেন্ডার জটিলতায় এখনো নবম শ্রেনীর বই ছাপা সম্পন্ন হয় নাই৷ ফলে সারাদেশের কথাও নবম শ্রেশীর বই এখনও পাইনি শিক্ষার্থীরা। সাইন্সের কিছু বই এসে পৌছেছে উপজেলায় এগুলে হয়তো এসপ্তাহের মধ্যেই আমরা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দিব বিতরনের জন্য। বাকি বইগুলো আসলে যথাক্রমে দ্রুতই পৌছে দেবার চেষ্টা করবো।