বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে

আবুসাঈদ শ্রীপুর থেকে

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান এবং বন্য প্রাণি চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইনকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারী) বন অধিদপ্তরের এক প্রশাসনিক নির্দেশে তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার স্থলে ফরিদপুর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক রফিকুল ইসলাম ও ডুলহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের ভেটেরিনারী সার্জন মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে পদায়ন করা হয়েছে।

বন অধিদপ্তরের অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের বন সংরক্ষক হোসাইন মোহাম্মদ নিশাদ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, প্রাণীগুলো মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং দায়িত্বে অবহেলাকারীদের সনাক্তকরণের লক্ষ্যে গঠিত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে ওই দু’জনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

চলতি মাসে সাফারি পার্কটিতে ১১টি জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় রোববার সাফারি পার্কে যান গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন এ মাসে একটি বাঘও মারা গেছে, যা গোপন রাখা হয়। এসময় সংসদ সদস্য কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অভ্যন্তরীন কোন্দল থাকার সন্দেহ পোষন করে জেব্রা হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন। একই সাথে বাঘ মৃত্যুর ঘটনা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গোপন রাখার অভিযোগ করেন। ওইসময় জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমান ও প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবিরকে স্বপদে বহাল রেখে তদন্ত সৃষ্ঠু হবে না বলে উল্লেখ করে তাদের অপসারনের কথা বলেন। এর পরদিন পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তবিবুর রহমানকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিকে, সোমবার (৩১ জানুয়ারী) বিকেল ৩টার দিকে পার্ক পরিদর্শনে যান গাজীপুরের সদ্য যোগদান করা জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান।

তিনি বলেন, কোভিড আক্রান্ত হয়ে তিনি রোববার কাজে যোগ দেন। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি লুকে থাকবেন। পরিচালন পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন আনা যায় কিনা সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তিনি সোমবার পার্ক পরিদর্শন করেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি পার্ক ত্যাগ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রা মারা যায়। ওই ঘটনায় প্রাণি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দেশের বিভিন্ন ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ২৩টি প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল ২৪ জানুয়ারী সোমবার পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামগারে বৈঠক করেন। বৈঠকশেষে বিশেষজ্ঞ বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড মারামারি করে চারটি এবং অন্যান্য পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশনাল ডিজিজে মারা গেছে বলে জানায়। আর জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং করণীয় বিষয়ে মতামত দেওয়ার লক্ষ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পরে শনিবার আরও দুটি জেব্রা মারা যায়।

দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা জেব্রা নানা সময়ে বংশ বিস্তারের পর পার্কটিতে এর সংখ্যা বেড়ে প্রায় তিনগুণ তথা ৩১টিতে দাঁড়ায়। ১১টি মৃত্যুর পর পার্কে এখন জেব্রা রয়েছে ২০টি।