বঙ্গবন্ধুর নামে ‘বনবন্ধুর’ মহাপ্রতারণা ; অবশেষে ঐ মহাপ্রতারককে গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জাহিদুর রহমান ইকবাল নিজের দেওয়া ‘বনবন্ধু’ উপাধি যোগ করে ‘বনবন্ধু’ জাহিদুর রহমান ইকবাল নামে নিজেকে পরিচয় দিতেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাণী সম্বলিত ছবিগুলোও নিজের ব্যবহৃত গাড়ির চারপাশে সজ্জিত করে রাখেন। মুজিববর্ষ উদযাপনের সুযোগ নিয়ে মহাপ্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী, মুজিববর্ষের লোগো ব্যবহার করে প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুদান চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এর পাশাপাশি মুজিবর্ষে গাছ লাগানোর কথা বলেও অভিনব পন্থায় বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এ মহাপ্রতারক।

দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে নিজেকে একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচয় দিয়ে তিনি প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। এছাড়াও ব্যাংক লোন পাইয়ে দেওয়া, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদনসহ নানা ধরনের কনসালটেন্সির নামে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানী ঢাকার কারওয়ান বাজারের শাহআলী ভবনে নিজের কথিত অফিস থেকে জাহিদুর রহমানকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। এরপর বেরিয়ে আসতে থাকে তার অভিনব পন্থায় নানা প্রতারণার তথ্যসমূহ।

ঐ মহাপ্রতারককে গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ২৭০ টি সীল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসিং ফাইল ১৮৪ টি, মুজিববর্ষের লােগো ব্যবহার করা ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সম্বলিত চিঠি ৫০০ টি, সিপিইউ দুইটি, প্রিন্টার দুইটি, স্ক্যানার একটি, মনিটর দুইটি, ল্যাপটপ একটি, মােবাইল দুইটি ও একটি টয়োটা করোলা গাড়ি জব্দও করা হয়েছে।

আজ বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুণ-অর-রশীদ নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার হারুণ-অর-রশীদ বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় গ্রেফতার জাহিদুর রহমান ইকবাল ওরফে বনবন্ধু জাহিদুর রহমান ইকবাল প্রতারণা করে আসছে। তার বর্তমানে মূল প্রতারণা মুজিববর্ষের লোগো, প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে চলছিলো। তিনি প্রায় ৪০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে চিঠি দিয়েছেন। ঐসব চিঠিসমূহের মাধমে তিনি ওই সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। প্রতারক বনবন্ধু জাহিদুর মুজিববর্ষে বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগাবে বলেও অনেকের কাছ থেকে টাকা নিতেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ মিলেছে।

জাহিদুর রহমানের বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার বর্ণনায় তিনি আরও বলেন, জাহিদুর রহমান প্রতারণামূলকভাবে অর্থ আত্মসাৎ করতেন। তিনি অবৈধভাবে সীল তৈরি ও সংরক্ষণ করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে মুজিববর্ষের লোগো ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে প্রায় ৪০ হাজার চিঠি পাঠিয়েছেন। এমনকি ঐ মহাপ্রতারক কনসালটেন্ট গ্রুপ লিমিটেড, এসএম ই কনসালটেন্ট লিমিটেড, ইইএফ কনসালটেন্ট লিমিটেড নামে তিনটি অবৈধ কোম্পানির চেয়ারম্যান এবং সিইও হিসেবে নিজেকে দাবি করেন। তবে, জাহিদুর ইকবাল কোম্পানিগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্রও দেখাতে পারেন নি। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন লোন পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করে কনসালটেন্সির নামে অর্থ আত্মসাৎ করতেন।

জাহিদুর রহমান ব্যক্তিগত গাড়িতে জাতির জনকের ছবি ব্যবহার করে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করতেন। যা জাতির জনকের ছবির অবমাননার শামিল। এছাড়া এনবিআর, আয়করের ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক থেকে লোন প্রসেসিং, বাংলাদেশ ট্রি প্ল্যান্টেশন ফাউন্ডেশন নামে নামসর্বস্ব্য অবৈধ প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে বৃক্ষরোপণের নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলেন।

উল্লেখ্য যে, প্রতারক ‘বনবন্ধু’ জাহিদুর রহমান ইকবালের অবৈধ প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্ট গ্রুপ লিমিটেড, এসএমই কনসালটেন্ট লিমিটেড ও ইইএফ কনসালটেন্ট লিমিটেডের ব্যানারে ফিনান্সিয়াল কনসালটেন্স, কোম্পানির রেজিস্ট্রেশন, সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন, ট্রাস্ট রেজিস্ট্রেশন, ফাউন্ডেশন রেজিস্ট্রেশন, বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার ডকুমেন্টস প্রসেসিং, ব্যাংক বিমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্টস প্রসেসেসিং, টিন ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ফায়ার লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স ডকুমেন্টস প্রসেসিং ইত্যাদির নামে অসংখ্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণের অর্থ আত্মসাৎও করেছেন।