ফাইজারের ৩ ডোজে নিষ্ক্রিয় হয় ওমিক্রন

ফাইজার-বায়োএনটেকের তিন ডোজ করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছে। এক বিবৃতিতে বুধবার টিকা নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গবেষণাগারে পরীক্ষায় এই সফলতা পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এ পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭টি দেশে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। পাল্লা দিয়ে বিভিন্ন দেশে বাড়ছে এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার। ডব্লিউএইচওর এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, করোনার টিকার কারণে পাওয়া সুরক্ষা ওমিক্রনের পক্ষে সম্পূর্ণভাবে ভেদ করা প্রায় অসম্ভব। এছাড়া ওমিক্রন ধরনের একটি লুক্কায়িত বা গুপ্ত সংস্করণ শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন তারা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওমিক্রনের নতুন সংস্করণ শনাক্ত হয় না প্রচলিত টেস্টে। খবর এএফপি, রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান।

ওমিক্রনের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা নিয়ে ফাইজার-বায়োএনটেকের পক্ষ থেকে প্রথম আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের টিকার দুটি ডোজে কম নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। কিন্তু তৃতীয় ডোজের পর অ্যান্টিবডির মাত্রা বাড়ে। ফাইজার প্রধান আলবার্ট বৌরলা বিবৃতিতে বলেছেন, যত বেশি সম্ভব মানুষকে প্রথম দুটি ডোজ ও বুস্টার ডোজ প্রদান করাই করোনার বিস্তার ঠেকানোর সবচেয়ে ভালো পরিকল্পনা। এক মাস আগে বুস্টার ডোজ নেওয়া মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে এটি ওমিক্রন ধরনটিকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। যেমনটি চীনে শনাক্ত হওয়া করোনার মূল ধরনের বিরুদ্ধে কার্যকর ছিল দুটি ডোজ। কোম্পানিটি জানিয়েছে, তারা ওমিক্রনকে লক্ষ্য করে একটি টিকা বাজারে আনতে কাজ চালিয়ে যাবে। প্রয়োজন হলে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ওমিক্রনভিত্তিক টিকা সরবরাহ করতে পারবে।

দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে : ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ডেল্টার তুলনায় ওমিক্রন সংক্রমণের হার কম। কিন্তু আশঙ্কা করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে যেভাবে এই ধরনটি ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে করোনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির হার সামনের দিনগুলোতে অনেক বাড়বে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও। দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ৬২ হাজারে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিবেশী দেশ এসওয়াতিনি, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক, নামিবিয়া ও লেসেথোতেও বাড়ছে এই ধরনটিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

ওমিক্রনের ‘গুপ্ত’ সংস্করণ : ওমিক্রনের সঙ্গে গুপ্ত সংস্করণটির অনেকগুলো মিউটেশনের মিল রয়েছে। কিন্তু এর নির্দিষ্ট জেনেটিক পরিবর্তনের অভাব আছে। এই নতুন সংস্করণটি এখন পর্যন্ত গতানুগতিক সব পরীক্ষায় করোনাভাইরাস হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। জিনোমিক পরীক্ষাতে ওমিক্রনের লুক্কায়িত সংস্করণ হিসাবে চিহ্নিত হতে পারে। তবে যেসব প্রচলিত পিসিআর টেস্টে দ্রুত শনাক্ত হয় তাতে এই সম্ভাব্য ধরনটি চিহ্নিত হচ্ছে না। গবেষণার জন্য গত কয়েকদিনে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে যে জিনোম দেওয়া হয়েছিল এর মধ্যে থেকেই ওমিক্রনের ‘লুক্কায়িত’ সংস্করণটি ধরা পড়ে। এটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

টিকার সুরক্ষা ভেদ অসম্ভব : ডব্লিউএইচওর এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাপকভাবে জিনগত রূপ পরিবর্তন করে আসা নতুন এ ধরন সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা থাকলেও প্রাথমিকভাবে হাতে আসা তথ্য-উপাত্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে, ডেল্টা কিংবা করোনার অন্য ধরনগুলোর চেয়ে ওমিক্রন মানুষকে বেশি অসুস্থ করবে না। সংস্থাটির জরুরি সেবাবিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেন, কোভিডের বিদ্যমান টিকাগুলো থেকে পাওয়া সুরক্ষা যে ওমিক্রন একেবারে পাশ কাটিয়ে যাবে-এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি।

শনাক্ত হয় না প্রচলিত টেস্টে : বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ওমিক্রন ধরনটির নতুন একটি সংস্করণের খোঁজ মিলেছে। পিসিআর টেস্টের মতো প্রচলিত করোনা পরীক্ষায় এ সংস্করণকে ওমিক্রন হিসাবে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। গত কয়েক দিনে দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে ওমিক্রনের নতুন সংস্করণটির উপস্থিতি মিলেছে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এটি আরও বেশ কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন সংস্করণটির একাধিক মিউটেশন রয়েছে। এদিক দিয়ে ওমিক্রনের সঙ্গে এটির মিল আছে। তবে সংস্করণটিতে ওমিক্রনের মতো একটি নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তন দেখা যায়নি। এ কারণেই পিসিআর টেস্টে একে ওমিক্রন হিসাবে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না।