প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেঁচে যাচ্ছে ৩৪২২ একর জমি

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেঁচে যাচ্ছে ৩ হাজার ৪২২ একর জমি। ময়মনসিংহ নতুন বিভাগীয় শহরের জন্য ৪ হাজার ৩৬৭ একর জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন দায়িত্বশীলরা। আগে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে। কিন্তু এটি অনুমোদন দেননি প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এর পরিবর্তে তিনি জমির পরিমাণ কমানার নির্দেশ দেন। পরে এই নির্দেশনা মেনে জমির পরিমাণ কমিয়ে ধরা হয়েছে ৯৪৫ একর। এজন্য এখন ‘ময়মনসিংহ বিভাগের বিভাগীয় সদর দপ্তর ও নতুন বিভাগীয় শহর স্থাপনের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ভূমি অধিগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ২২৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

 

সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ফের একনেকে উপস্থাপন করা হবে প্রকল্প প্রস্তাবটি। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার অফিস এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবে পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশ মেনে বাঁধ তৈরির কাজ করবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করা হয়েছে। ফলে এখন এটি পুনরায় একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুপরিকল্পিত ও আধুনিক ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহর স্থাপনসহ বিভাগীয় সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য স্থান সংকুলান করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে প্রশাসনের দক্ষতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ দেশের অষ্টম প্রশাসনিক বিভাগ। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ৪টি জেলা নিয়ে (জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা) ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়। এ বিভাগের আয়তন ১০ হাজার ৪৮৫ বর্গকিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১ কোটি ১৩ লাখ ৭০ হাজার জন। ময়মনসিংহ জেলা শহরটি বর্তমান ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীর বরাবর প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত। প্রধানমন্ত্রী নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরটিকে একটি আধুনিক ও বহির্বিশ্বের উন্নত শহরের আদলে স্থাপনের জন্য দিকনির্দেশনা দেন। সেজন্য নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ময়মনসিংহ বিভাগীয় শহরের জন্য একটি ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট ময়মনসিংহে নতুন বিভাগীয় শহর উন্নয়ন সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগের নতুন বিভাগীয় শহর উন্নয়ন পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী প্রকল্পের ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) তৈরি করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু সেদিন এটি অনুমোদন করা হয়নি।

ওই একনেক সভায় নবগঠিত ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের অপর পাড়ে যথাসম্ভব কম জমি অধিগ্রহণ করে বিভাগীয় সদর দপ্তরগুলো নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য নতুন ডিজাইন করে প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশনাও দিয়েছিলেন তিনি। একনেক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগে প্রস্তাবিত ৪ হাজার ৩৬৭ একরের স্থলে এখন ৯৪৫ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমগুলো হচ্ছে ৯৪৫ দশমিক ২১৯ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ ও প্রশাসনিক খরচ এবং ২ লাখ ৩১ হাজার ২৭৬ ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন করা হবে। এছাড়া ৪ হাজার ২১৪ মিটার মাস্টার ড্রেন নির্মাণ, ১৪ হাজার ৯১৩ মিটার সীমানা দেওয়াল ও গাইড ওয়াল নির্মাণ। আরও কার্যক্রম হলো-২২ হাজার ৮২৪ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ১ হাজার ১৮০ মিটার বাঁধ নির্মাণ এবং ধর্মীয় স্থান উন্নয়ন ও উপাসনালয় নির্মাণ করা হবে।

সূত্র জানায়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া অন্য সুপারিশগুলোও প্রতিপালন করা হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা হবে। পিইসি সভায় বলা হয়, পুনর্বাসন জোনের ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনাসহ ক্ষতিগ্রস্তদের কোন নির্ণায়কের ভিত্তিতে, কত আয়তনের প্লট, কত দিনের মধ্যে কী কী সাইট ফ্যাসিলিটিজ থাকবে-সেগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরতে হবে। এক্ষেত্রে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, পুনর্বাসন এলাকার ভূমি উন্নয়ন, রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ করা হবে। এরপর প্লট তৈরি করে চারপাশে আড়াই ফুট উচ্চতার গাইডওয়াল নির্মাণ করে লটারির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হবে। এছাড়া ডিজিটাল সার্ভের জন্য ১ কোটি টাকার বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন দিতে বলা হয়। সেই সঙ্গে ডিপিপির লগফ্রেম পুনর্গঠনের কথা বলা হয়। এসব নির্দেশনা প্রতিপালন করা হয়েছে।