প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে আতংক

বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। ওমর ফারুক চৌধুরী কেবল বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যানই নন, তিনি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আত্মীয়ও বটে। শেখ ফজলুল হক মণির ছোট বোনের জামাই তিনি। যুবলীগ চেয়ারম্যানের যখন ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আত্মীয়দের মধ্যেও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ এই ব্যাংক হিসাব তলবের আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বাণিজ্যিক কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বলেছিলেন আত্মীয় বা নেতা, যে-ই হোক না কেন, কেউ যদি অন্যায় করে তাকে শাস্তি পেতে হবে। এর মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে এ নিয়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজন কম না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মণির ছোট ভাই এবং প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়। তিনি বর্তমানে একজন সংসদ সদস্যও বটে।

শেখ হেলাল পার্লামেন্টের সদস্য এবং তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাইয়ের ছেলে। শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময়ও এবার জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছেন।

আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয়। তিনিও জাতীয় সংসদের সদস্য।

নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনও প্রধানমন্ত্রীর নিকটাত্মীয়। তিনি বর্তমানে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ।

প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনও বর্তমানে জাতীয় সংসদের এমপি এবং সাবেক মন্ত্রী। তিনি আওয়ামী লীগের নেতা। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের জামাই ডাক্তার হাবীবে মিল্লাতও বর্তমানে এমপি।

সাংসদ মাহাবুব আরা বেগম গিনি প্রধানমন্ত্রীর শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে আত্মীয়। তিনি বর্তমানে হুইপ।

কাজী জাফরুল্লাহ, মাহবুবুল আলম হানিফ, আমির হোসেন আমুও বিভিন্ন সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়। প্রধানমন্ত্রীর নিকট এবং দূর সম্পর্কের আরও আত্মীয় স্বজন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছেন। ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করার প্রেক্ষিতে এ সমস্ত আত্মীয়রা আতংকিত হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

এরকম একজন আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন যে, আমরা যদি অন্যায় না করে থাকি, তাহলে আতংকিত হবার কিছু নাই। আমরা আতংকিত নই। প্রধানমন্ত্রী যে কাজটা করছেন সেটা দেশের জন্য মঙ্গলজনক এবং আমরা সবসময় শেখ হাসিনাকে দেশের মঙ্গলের জন্য জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সহযোগীতা করেছি।

উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকারি পদ পদবী থেকে আত্মীয়দের দূরে রাখছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (শেখ হাসিনার বেয়াই) ছাড়া কোনো আত্মীয়কে মন্ত্রিত্ব দেননি। আবুল হাসনাত আবদুল্লাহকে মন্ত্রিত্বের মর্যাদা দেওয়া হলেও এই মেয়াদে সেটি আর বহাল নেই বলে জানা গেছে। ২০০৯ সাল থেকেই শেখ হাসিনা যে সরকারি কর্মকাণ্ড থেকে তার আত্মীয়দের দূরে রাখছেন, এর ফলে আত্মীয়দের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ খুবই কম বলে ধারণা করা হচ্ছে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলবের ঘটনায় অনেকেই মনে করছেন যে, মন্ত্রী এমপি না হলেও অনিয়মে কেউ জড়িয়ে পড়তে পারেন। এটাই অনেকের আতংকের কারণ। তবে প্রধানমন্ত্রী তার নিকটাত্মীয়দেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে, শুদ্ধি অভিযান বা তদন্ত কারও বিরুদ্ধে নয়। কেউ যদি অন্যায় না করে থাকে, তাহলে অযথা তাকে হয়রানি করা হবে না। এ নিয়ে আতংকের কিছু নাই। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফেরার পর শুদ্ধি অভিযান নতুন মাত্রা নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।