প্রকল্প ব্যয় ১৪৫ কোটি: ১৩৬ কোটি টাকার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন, প্রকল্প বাতিল

এমরান হোসেন, জামালপুর প্রতিনিধি: ১৯৩৮ সালে ব্রিটিশ সরকার জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ফেরি ঘাটটি চালু করেছিল।উত্তরাঞ্চলের ১৩টি জেলার হাজার হাজার মানুষ এই ঘাট দিয়ে পার হয়ে ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করতো। এই ঘাটটি দেশের উত্তরাঞ্চল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের মাঝে যোগাযোগের সেতুবন্ধন ছিল।কিন্তু নাব্যতা সংকট, নদীর গতি-প্রকৃতি বারবার বদলে যাওয়া ও বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর ২০০৫ সালের ১৫ জুন যমুনার দুই পাড়ের মানুষের চলাচলের বাহাদুরাবাদ ফেরি ঘাটটি বন্ধ হয়ে যায়। ফেরিঘাট বন্ধ হওয়ার পর থেকে দুই পাড়ের হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন ইঞ্জিনচালিত ও ছোট ছোট নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই নদীপথে চলাচল করছে। এতে যেমন নৌ দূর্ঘটনার শিকার হয়ে বহু লোক প্রাণ হারিয়েছে, তেমনি অতিরিক্ত সময় ও বেশি ভাড়া লাগছে যাত্রীদের। তবুও থেমে নেই দুই পাড়ের মানুষের যাতায়াত।

২০১৩ সালের ২৯ মার্চ বিআইডাব্লিউটিএ-এর প্রশাসন সংক্রান্ত এক সভায় নৌরুটটি আবারও চালু করে ফেরিঘাট নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৪ সালের ১২ মার্চ নৌমন্ত্রী, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, ডেপুটি স্পিকার, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামত নিয়ে ফেরি চালুর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন এবং তার আলোকে ডিপিডি প্রস্তুত করা হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে একনেক সভায় এই প্রকল্প অনুমোদন হয়। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২৪ কোটি ৭৭ লাখ ও ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ ধরা হলেও পরবর্তীতে প্রকল্প দুইবার সংশোধন করে ২০ কোটি ২৫ লাখ ব্যয় বৃদ্ধি এবং ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়।

বিআইডাব্লিউটিএ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে এসে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য কারিগরি টিম গঠন করে।এই কমিটি গত এপ্রিল-মে মাসে সরেজমিনে এই নৌপথের সম্ভাব্যতা যাচাই করে সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। প্রতিবেদনে নৌপথের নাব্যতা সংকট, ২৬ কিলোমিটারের বিশাল দূরত্বের নৌপথ, একবার পার হতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগা, স্টেকহোল্ডার অ্যানালিসিস ও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করে প্রকল্পের স্থান নির্ধারণ করাসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে এই নৌপথ ফেরি চলাচলের উপযোগী নয় বলে মতামত দিয়েছে কারিগরি কমিটি।

এ বিষয়ে জামালপুর-১ (দেওয়ানগঞ্জ-বকশিগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এমপি জানান, বাহাদুরাবাদ টু বালাসী ফেরিঘাট চালু করার জন্য যা কিছু করা দরকার তা-ই করবো। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে আছেন, তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সুস্থ হয়ে দেশে আসলে দুইজন মিলে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই ফেরিঘাট চালু হবে, এটি এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি ছিল। এ ঘটনায় মানুষের বুকে লালিত স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।হাজারো মানুষের স্বপ্নপূরণে পুনরায় নৌপথ চালু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি করছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম আব্দুল্লাহ বিন রসিদ জানান,এই ফেরিঘাট চালু হলে মানুষের যাতায়াতের অনেক সুবিধা হবে।রাজধানীর সাথে উত্তরাঞ্চলের দুরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার কমে যাবে। এই অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে। আমি প্রত্যাশা করছি কারিগরি কমিটি পুনরায় সমীক্ষা চালিয়ে কিভাবে নৌপথটি চালু করা যায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

যমুনার দুই পাড়ের হাজারো মানুষের চোখে মুখে স্বপ্নভঙ্গের করুণ ছাপ।