পাবনায় ৫৯৫ জন চরমপন্থীর আত্মসমর্পণ

রাজিবুল হক রনি : পাবনায় ৫৯৫ জন চরমপন্থী পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে জেলা স্টেডিয়ামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে অস্ত্র জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন। তারা ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৭৫টি স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র জমা দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি অন্ধকারে থাকা অস্বাভাবিক জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানিয়েছেন। স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিতের তাগিদেই মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে সশস্ত্র অবস্থায় তারা আত্মসমর্পন করেন।

দেশের ১৪টি জেলার পূর্ববাংলার সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটির নামের ৪টি চরমপন্থি সংগঠনের ৫৯৫ জন চরমপন্থি সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। এসময় তারা ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৭৫টি দেশীয় অস্ত্র জমা দেন।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে পাবনার ১৩২ জন, টাঙ্গাইলের ৩১ জন, যশোরের ২ জন, নড়াইলের ২ জন, সাতক্ষীরার ৬ জন, খুলনার ৩৫ জন, রাজবাড়ীর ৩৪ জন, ফরিদপুরের ২৮ জন, বগুড়ার ১৫ জন, নাটোরের ২৭ জন, সিরাজগঞ্জের ৬৯ জন, রাজশাহীর ৬২ জন, জয়পুরহাটের ৮২ জন এবং নওগাঁর ৭০ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল লালপতাকা, জনযুদ্ধ, সর্বহারা, কাদামাটি পার্টি ও নকশালের আঞ্চলিক নেতা ও সদস্যের আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও অবশেষে ৫৯৫ জন আনুষ্ঠানিক ভাবে আত্মসমর্পণ করেন। এসময় তারা বিভিন্ন ধরনের ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৫৭৫ টি দেশীয় অস্ত্র জমা দেয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভুল বুঝে যারা উগ্রবাদ চরমপন্থি সংগঠনে যোগ দিয়েছিল, তারা নিজেদের ভূল উপলব্ধি করতে পেরে আত্মসমর্পণ করছেন। জলদস্যু , মাদক কারবারী ও চরমপন্থিরা সবাই একে একে আত্মসমর্পণ করছে। আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনীর সাথে ১০ বছর আগের বাহিনীর তুলনা করা চলবে না। কারন বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনী অত্যন্ত দক্ষ। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে পার পাওয়া যাবে না। যে সকল চরমপন্থি সদস্যরা আত্মসমর্পণ করলেন তারা যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন এজন্য আর্থিক অনুদান দেয়া হচ্ছে। আত্মসমর্পনকারীদের আইনী সহায়তার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করবে সরকার।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ১৯৯৯ সালেও আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২ হাজার চরমপন্থি সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি, যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করলে তাদের সামনেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থা আর আগের মতো নেই। তারা এখন জলদস্যু, বনসদ্যু, চরমপন্থী, মাদক সন্ত্রাসীদের দমন করতে সক্ষম। যে কোনও ধরনের নাশকতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নির্মূলে পুলিশ বাহিনী স্বোচ্চার।

মন্ত্রী জানান, পাবনার এই অনুষ্ঠানে যে সব চরমপন্থী নেতা-কর্মী আত্মসমর্পণ করলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিত। যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছেন।

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেন, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর, রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জি: এনামুল হক, পাবনা-সিরাজগঞ্জ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াছমিন জলি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন বিপিএম (বার), পিপিএম ও পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন।

আত্মসমর্পণকারীদের অনেকের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র মামলা রয়েছে। তারা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। আত্মসমর্পণ করলেও তাদের নিয়মিত মামলা চলবে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।