পাক-ভারত যুদ্ধ যদি লেগেই যায় বাংলাদেশের কী হবে?

এই আমার দেশ ডেস্ক : টানটান উত্তেজনা চলছে পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে । দুই দেশই সীমান্তবর্তী কাশ্মীরে হামলা-পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এই হামলা যুদ্ধে রূপ নেয়ার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত যদি যুদ্ধটা লেগেই যায়, তাহলে এই উপমহাদেশে কেমন প্রভাব পড়বে? বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই বা কী ঘটবে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, পাক-ভারত যুদ্ধে জড়ালে বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাব খুব কমও পড়বে না, আবার খুব বেশিও পড়বে না। কারণ একটা সময় বাংলাদেশ পাক-ভারত দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক রেখে চললেও এখন অবস্থা বদলেছে। আগে ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গেও বাংলাদেশের অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য হতো। দুই দেশের সঙ্গেই বাংলাদেশ ব্যালেন্স রেখে চলতো। কিন্তু গত এক দশকে এই অবস্থা পুরোপুরি পাল্টে গেছে। কিছুদিন আগে তো বাংলাদেশ পাকিস্তানের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকেও প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন শীতলতম পর্যায়ে পৌঁছেছে। কাজেই পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশ কার পক্ষ নেবে এ নিয়ে অস্বস্তিকর কূটনীতির মধ্যে পড়তে হবে না।

শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে একটা বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সুস্পষ্ট হয়েছে। তা হলো- সীমান্ত সন্ত্রাস এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে বাংলাদেশ কোনোভাবেই সমর্থন দেয় না। কাশ্মীরে যে ঘটনাটা ঘটলো, সেটাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের ফল হিসেবেই দেখা হয়। এই যে, লস্কর-এ তৈয়েবা বা জইস-ই-মোহাম্মদের মতো সংগঠন এরা মূলত বিচ্ছিন্নতাবাদী দল। বাংলাদেশের জন্য এটা একটা স্বস্তির জায়গা যে, বিচ্ছিন্নতাবাদকে প্রশ্রয় দেবে না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছে এদেশের সরকার।

পাক-ভারত যুদ্ধ হলে যে বিষয়টা হতে পারে যে, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের মনোযোগ কিছুটা কমে যেতে পারে। আরেকটি বিষয় হলো, দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা জঙ্গি দলগুলোর তৎপরতা বেড়ে যায়। কাশ্মীর, আসাম, অন্ধ্রপ্রদেশসহ বেশ কিছু এলাকায় ভারতের অনেকগুলো বিচ্ছিন্নতাপন্থী সংগঠন আছে। পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে ভারত স্বাভাবিকভাবেই এই সংগঠনগুলোর ওপর দৃষ্টি দিতে পারবে না। তখন চাপে পড়বে বাংলাদেশ। কারণ বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গি সংগঠনগুলোর একটা বহিরাগমন পথের দরকার হয়। ভারত সীমান্তবর্তী বাংলাদেশকে এই পথ হিসেবে বেছে নিতে পারে সংগঠনগুলো।

তাছাড়া পাকিস্তান এই সংগঠনগুলোকে নিয়মিতভাবে অস্ত্র-অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে বলে অভিযোগ আছে। পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে, দিল্লিকে চাপে ফেলতে ইসলামাবাদ এই জঙ্গি গোষ্ঠিগুলোকে অর্থসাহায্য বাড়িয়ে দেবে বলেই ধারণা করা হয়। এতে করে বাংলাদেশেও জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে পাক-ভারত যুদ্ধ হলে, পাকিস্তান বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে চাইবে। বাংলাদেশের জন্য এটাই হলো অস্বস্তিকর।

তবে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে তো বটেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের সামর্থের ওপর ভর করে চলছে এই দেশ। কাজেই পাক-ভারত যুদ্ধে বাংলাদেশের ভড়কে যাওয়ার মতো কিছু নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।