পাকুন্দিয়ায় নতুন উদ্ভাবন ওয়েল্ডিং মেশিন দাম মাত্র ৫০০ টাকা

সৈয়দুর রহমান সৈয়দ- পাকুন্দিয়া, কিশোরগন্জ,প্রতিনিধি ঃ কিশোরগন্জের পাকুন্দিয়া নতুন উদ্ভাবিত ওয়েল্ডিং মেশিন উৎপাদনে খরচ পড়বে মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। যেখানে একটি ওয়েল্ডিং মেশিনের বাজার মূল্য ২০থেকে ৬০ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, অধিক নিরাপদ, সহজে উৎপাদন ও বহন করা যায় এমন একটি স্বল্প খরচের ওয়েল্ডিং মেশিন উদ্ভাবন করে আলোচনায় ঝড় তুলেছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে মোঃ লালন মিয়া(২৭)। তার উদ্ভাবিত ওয়েল্ডিং মেশিনের খরচ অন্যান্য ওয়েল্ডিং মেশিন থেকে ৫০ থেকে ১০০ গুন কম খরচ পড়বে। সরকারি বা কোন বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং সহায়তা পেলে খুব শিগ্রই বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এতে যারা পুঁজির অভাবে ওয়ার্কশপের কাজ শিখে দোকান নিতে পারছেন না এমন গ্রাহকের চাহিদা পূরণসহ সল্প দামে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে দাবি করেছেন লালন মিয়া।

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে সুখিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া লালন মিয়া ছোট বেলা থেকেই নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশায় মত্ত থাকতেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান লালন মিয়া উপজেলার বাহরাম খান পাড়া জে,কে  উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়ার করে, সংসারের অভাবের কারনে আর লেখাপড়া করতে পারেনি, জীবিকার সন্ধানে ২০০৭ সালে রাজধানীর একটি ওয়ার্কশপে চাকরি করেন। ২০১২ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্কশপে কাজ করে কিছু পুঁজি করে ২০১৭ নিজ এলাকার সুখিয়া বাজারে ইকরা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ নামে একটি দোকান দেন। ঐ সময়ে ওয়েল্ডিং মেশিন কিনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়, তখন থেকেই নতুন কিছু আবিষ্কারে উদ্দ্যোগী হন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে আবিষ্কারের অবচেতন মন জেগে উঠলে স্বল্প খরচে ওয়েল্ডিং মেশিনের উৎপাদন আবিষ্কারে নেমে পড়েন লালন মিয়া। সফল হওয়ার পর আবিষ্কৃত ওয়েল্ডিং মেশিনের নাম দেন ‘ওয়াটার ওয়েল্ডিং মেশিন’।

লালন মিয়া জানান, তার আবিষ্কৃত এই ওয়েল্ডিং মেশিনে বিদ্যুৎ কম খরচ হয় । তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে প্লাস্টিকের ড্রাম, পুকুর বা নদীর পানি, পরিমাণ মতো দুইটি লোহার পাত ও ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রনের জন্য পরিমান মতো লবণ দিয়ে ওয়েল্ডিং মেশিনটি উদ্ভাবন করেছেন। তার উদ্ভাবিত মেশিনটির খরচ হয়েছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। প্রথমে ধাপে তার আবিস্কৃত মেশিনটিতে কলের পানি দিয়ে চালাতে গিয়ে অকৃতকার্য হলেও হাল ছাড়েননি। আরো চিন্তাভাবনা করে নদীর পানি ও লবণ দিয়ে ওয়াটার ওয়েল্ডিং মেশিনটি চালাতে সফল হন।

লালন মিয়া জানান, তার এই উদ্ভাবনকে তিনি দেশের মানুষের কল্যাণে কাজে লাগাতে চান। কম খরচে মেশিনটি আবিষ্কার করলেও কোন ইঞ্জিনিয়ারিং পরিক্ষা এবং অনুমতিপত্র না থাকার কারণে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে বাজারজাত করতে পারছেন না। যদি সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে, তা হলেই তার এই উদ্ভাবন হয়তো দেশের মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।

উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ন- আহবায়ক ও শ্রমিকলীগের সদ্য সাবেক আহবায়ক শামীম আহমেদ জানান, লালন মিয়া কিছুদিন আগে সুখিয়া বাজারে নিজ দোকানে এই ওয়েল্ডিং মেশিনটি বসিয়েছেন এবং কাজ করতেছেন। যদি সরকারি ভাবে কোন ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা পরিক্ষা-নিরিক্ষা করে বাজার জাত করা হয় তাহলে বাংলাদেশের চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা যাবে।

স্হানীয় বাজারের ইলেকট্রিশিয়ান রতন মিয়া বলেন, আমি ১৫ বছর ধরে ওয়েল্ডিং মেশিন সহ বিভিন্ন ধরণের ইলেক্ট্রিকেল কাজ করছি, এই ওয়াটার ওয়েল্ডিং মেশিন একটি অসাধারণ আবিস্কার যদি কোন প্রকৌশলী দ্বারা মান নিয়ন্ত্রন করে বাজারে আনা যায় তাহলে সল্প পুঁজির ব্যাবসায়ীরা অনেক উপকৃত হবে ও দেশের কল্যানে কাজে লাগবে।