পাকিস্তানে বসে কাবুল বিমানবন্দর নিয়ে যা জানালেন তুরস্কের মন্ত্রী

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটির ১০টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করে নিয়েছে তালেবান। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে- তুরস্ক এখনও কাবুল বিমান বন্দর রক্ষার দায়িত্ব নিতে চায় কী না?

বুধবার তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তারা জানান, তারা এখনও কাবুল বিমানবন্দর পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল। তবে তালেবান যেহেতু দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে, এ কারণে তারা আফগানিস্তানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের তুর্কি দূতাবাসে উপস্থিত থেকে তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর বলেন, কাবুল বিমানবন্দর খোলা রাখা উপকারী হবে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তুরস্ক এ বিষয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করবে।

আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র কাবুল বিমানবন্দর রক্ষার জন্য তুরস্ককে প্রস্তাব দিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন। তবে তিনি এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আর্থিক, কূটনৈতিক এবং লজিস্টিক সমর্থন চেয়েছেন।

তবে তালেবান কাবুল বিমানবন্দর পাহারা দেওয়ার বিষয়ে তুরস্ককে হুশিয়ারি দিয়েছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি বলছে, তারা আফগানিস্তানে কোনো বিদেশি সেনা দেখতে চান না। যদিও তুরস্ক তালেবানের হুমকি আমলে না নিয়ে বিমানবন্দর পাহারা দেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল আছে।

যে কারণে তুরস্ক বিমানবন্দর পাহারা দিতে চায়
আফগানিস্তানে কর্মরত পশ্চিমা কূটনীতিক ও কর্মীদেরকে নিরাপদে দেশটি থেকে বের করে নেওয়ার প্রধান রুট হচ্ছে কাবুল বিমানবন্দর। ন্যাটো ও মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হলে তালেবানের হাতে বিমানবন্দরটির পতন হতে পারে ভেবে ওয়াশিংটন শঙ্কিত। এ কারণে এটির নিরাপত্তা রক্ষার ওপর বাইডেন প্রশাসন ব্যাপক জোর দিচ্ছে।

তুর্কি সাংবাদিক ইলহান উজগেলের মতে, আঙ্কারা বর্তমানে কাবুল বিমানবন্দর মিশনকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক ফিরিয়ে আনার চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচনা করছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কাবুলে উপস্থিতির মাধ্যমে এরদোগান সরকার এখন বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের প্রয়াস চালাচ্ছে। এজন্য তারা ওয়াশিংটনের জন্য ভালো কিছু করে দেখাতে চায়। আঙ্কারা প্রমাণ করতে চাইছে, তুরস্ক মিত্র হিসেবে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ, যাকে চাইলেই উপেক্ষা করা যায় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্কের বর্তমান অবস্থানের সম্ভাব্য ফলাফল দুটি হতে পারে। প্রথমত, তালেবানদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে পারে তুরস্ক। অথবা আফগানিস্তানে শান্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে দেশটিতে প্লেমেকারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে আঙ্কারা।

এরদোগানের বিশ্বাস, ন্যাটোর একমাত্র মুসলিমপ্রধান দেশের পরিচয় ও আফগানিস্তানের সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আফগান সরকার ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবেন তিনি।