পর্তুগালের বিদায়, ইতিহাস গড়ে সেমিতে মরক্কো

স্পোর্টস ডেস্ক: অঘটন! নাকি পরিশ্রম ও ভালো খেলার পুরস্কার? একটি ম্যাচ অঘটন হতে পারে। কিন্তু তাই বলে পর পর দু’ম্যাচে স্পেন ও পর্তুগালের মতো দলকে হারানো! তাও রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে নয়। রক্ষণের পাশাপাশি নিয়মিত আক্রমণে খেললেন হাকিমি-জিয়েচরা। 

প্রথমার্ধে গোল করে মরক্কোকে এগিয়ে দেন আন-নিসিরি। অনেক চেষ্টা করেও মরক্কোর রক্ষণ ভাঙতে পারেনি পর্তুগাল। দ্বিতীয়ার্ধে বাধ্য হয়ে রোনালদোকে মাঠে নামান পর্তুগিজ কোচ ফের্নান্দো স্যান্টোস। তাতেও কিছু হয়নি। 

কাতার বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন সিআরসেভেন। হয়তো শেষবারের মতো। অন্যদিকে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে আফ্রিকার প্রথম দল হিসাবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠলো মরক্কো।

খেলার শুরু থেকে অবশ্য আক্রমণ বেশি ছিল পর্তুগালের। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে বক্সে ক্রস করার চেষ্টা করছিল তারা। ৪ মিনিটের মাথায় ব্রুনো ফের্নান্দেসের ফ্রি-কিক থেকে দুরন্ত হেড করেন জোয়াও ফেলিক্স। তার হেড বাঁচিয়ে দেন মরক্কোর গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো। 

সেট পিস থেকে ফায়দা তোলার চেষ্টা করছিল পর্তুগাল। ১২ মিনিটের মাথায় ব্রুনোর আরও একটি ফ্রি-কিক থেকে গোল করার সুযোগ পেয়েছিল পর্তুগাল। রাফায়েলের শট আটকে যায় মরক্কোর ডিফেন্ডারের গায়ে। প্রথম ১৫ মিনিটে দু’বার প্রতি আক্রমণে ওঠা ছাড়া বিশেষ কিছু করতে পারেনি মরক্কো।

১৫ মিনিটের পর থেকে খেলায় ফেরে মরক্কো। প্রান্ত ধরে আক্রমণ করতে থাকেন হাকিমি, জিয়েচরা। কিন্তু খুব একটা সমস্যায় পড়েননি পর্তুগালের গোলরক্ষক কোস্তা। ৩০ মিনিটের মাথায় আবার মরক্কোর গোলের কাছে পৌঁছে যায় পর্তুগাল। বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ে জোরালো শট করেন ফেলিক্স। বল সরাসরি গোলের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে গোলের একটু উপর দিয়ে বল চলে যায়। গোলে থাকলে সমস্যায় পড়তেন বোনো।

প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিট দাপট দেখালো মরক্কো। বলের দখল বেশি ছিল তাদের। ছোট ছোট পাসে খেলছিলেন হাকিমিরা। একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল পর্তুগাল বক্সে। তার ফলও মিলল। ৪২ মিনিটের মাথায় এগিয়ে গেল মরক্কো। নিজেদের মধ্যে বেশ কয়েকটি পাস খেলে বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণে ওঠে মরক্কো। বক্সে বল ভাসিয়ে দেন এল-ইদ্রিসি। আগুয়ান গোলরক্ষক কোস্তা বলের নাগাল পাওয়ার আগে অনেকটা লাফিয়ে হেডে গোল করেন আন-নেসিরি। 

গোল খাওয়ার পরে শোধ করার চেষ্টা করে পর্তুগাল। সুযোগও পায় তারা। বক্সের বাইরে থেকে ব্রুনো ফের্নান্দেসের শট বারে লেগে বেরিয়ে যায়। প্রথমার্ধে ০-১ গোলে পিছিয়ে সাজঘরে যায় পর্তুগাল।

দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ ছিল মরক্কোর। ৪৯ মিনিটের মাথায় হাকিম জিয়েচের ফ্রি-কিক আর একটু হলেই জালে জড়িয়ে যেতো। কোনও রকমে সেই বল বার করেন কোস্তা। চাপ বাড়তে থাকায় রোনালদোকে মাঠে নামিয়ে দেন স্যান্টোস। তার পর থেকে চাপ বাড়াতে থাকে পর্তুগাল। বেশ কয়েকবার মরক্কোর বক্সে পৌঁছে যান রোনালদোরা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সব আক্রমণ প্রতিহত হয়ে যাচ্ছিল। ৬৩ মিনিটের মাথায় বক্সের মাথা থেকে ফের্নান্দেসের শট বার ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়। বার বার আক্রমণে কিছুটা চাপে পড়ে যাচ্ছিল মরক্কো।

৬৫ মিনিটের পর থেকে পুরো খেলাটাই হচ্ছিল মরক্কোর অর্ধে। গোল করার জন্য পর্তুগালের পুরো দল উঠে যায়। একের পর এক আক্রমণ হচ্ছিল। কিন্তু মরিয়া রক্ষণ করছিলেন মরক্কোর ফুটবলাররা। পর পর চারটি কর্নার পায় পর্তুগাল। কিন্তু সেখান থেকে ফল পায়নি রোনালদোরা। গোল না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠছিলেন পর্তুগালের ফুটবলাররা।

৮২ মিনিটের মাথায় একটুর জন্য গোল করতে পারেননি হোর্তা। রোনালদোর সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে বক্সে ঢোকেন তিনি। বাঁ পায়ের বাঁক খাওয়ানো বল গোলে ঢুকছিল। শেষ মুহুর্তে তা বার করে দেন বোনো। সব রকম চেষ্টা করেও মরক্কোর রক্ষণ ভাঙা যাচ্ছিল না। উল্টে প্রতি আক্রমণ থেকে কয়েকবার উঠে আসছিল মরক্কো। তাতে সময় আরও যাচ্ছিল।

সংযুক্তি সময়ে গোল করার দারুণ সুযোগ পান রোনালদো। বক্সের মধ্যে থেকে তার ডান পায়ের শট বাঁচান বোনো। ৯২ মিনিটের মাথায় দ্বিতীয় ফাউল করে লাল কার্ড দেখেন মরক্কোর চেদিরা। ১০ জনে হয়ে যায় মরক্কো। তার পরেও গোল করতে পারেনি পর্তুগাল। হেরেই মাঠ ছাড়তে হয় রোনালদোদের।