নিখোঁজের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সন্ধান মেলেনি শিশু শ্রেনির ছাত্র মুরসালিনের

 গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: গোপালগঞ্জ কাশিয়ানী উপজেলার সাজাইল ইউনিয়নের আমডাকুয়া গ্রামের শিশু হুসাইন মোঃ মুরসালিনের (৬) খোঁজ মেলেনি। প্রায় তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত  নিখোঁজ রয়েছে সে। নিখোঁজের ঘটনায় মুরসালিনের পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে চরম হতাশা। যে কোনো মূল্যে সন্তানকে ফেরত পেতে মরিয়া ওই পরিবার। ছেলের খোঁজ না পেয়ে মায়ের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। সারাক্ষণ মুরসালিনের ফিরে আসার প্রতিক্ষায় প্রহর গুনছেন মা রুবিনা। এই বুঝি তার ছোট্টখোকা এসে মা বলে ডাক দিয়ে জড়িয়ে ধরে। গত ২ আগষ্ট শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়তে বাড়ির পাশে সাজাইল বাজারের জামে মসজিদে যায় মুরসালিন। তারপরে আর বাড়িতে ফিরে আসে না। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অনেক খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। সন্তানকে না পেয়ে বাধ্যহয়ে ১৮ আগষ্ট মুরসালিনের বাবা মোঃ বাচ্চু সরদার কাশিয়ানী থানায় ৪ জনকে আসামী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।অভিযুক্তরা হলেন, আমডাকুয়া গ্রামের ছামাদ মুন্সীর ছেলে আসাদ মুন্সী (৬০), ছত্তার সরদারের ছেলে হারুন সরদার (৫৭), রাইতকান্দি গ্রামের নাজির শেখের মেয়ে বেদেনা ও ইউসুফ শেখের ছেলে রাসেল শেখ। ওই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে কাশিয়ানী  পুলিশ আসামী আসাদ মুন্সী ও হারুন সরদারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। হারুন সরদার ও আসাদ মুন্সী জামিনে মুক্তি পেয়ে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছেন বলে জানান মোঃ বাচ্চু সরদার।মুরসালিনের মা রুবিনা বেগম বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি করতেছি আমার সন্তানকে ফেরত এনে দেন। আমার সন্তানকে আমার কোলে ফেরত চাই। আমার সন্তানতো নিষ্পাপ  ফেরেশতা। যে বা যারা আমার সন্তানকে নিয়ে গেছে তাদেরও শাস্তি চাই না, শুধু আমার সন্তানকে চাই।মুরছসালিনের বাবা মোঃ বাচ্চু সরদার বলেন, আমার সন্তান নিখোঁজের পর পাড়া প্রতিবেশি সকলেই সহমর্মিতা জানাতে আমাদের বাড়িতে এসেছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে আসামীর বাড়ির কেউই আমাদের বাড়িতে আসেন নি। এতে তাদের উপর আমার সন্দেহ হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে নিখোঁজের পর ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের কোন প্রকার সহযোগিতা করেন নি। উল্টো আসামীরা তার ছত্রছায়ায় থেকে আমাদেরকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। চেয়ারম্যান কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় মামলাকেও প্রভাবিত করছে। সাজাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নিখোঁজের খবর পেয়ে আমি ওই ওয়ার্ডের মেম্বারকে অবহিত করি এবং থানায় অভিযোগ করার জন্য বলি। বাচ্চু সরদার তার সন্তানকে হারিয়ে ব্যথিত হয়েছেন, আমিও তার ব্যাথায় সমান ব্যথিত। আশা করি দ্রুতই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার সন্তানকে খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে। ১১নং সাজাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক তুহিনা পারভীন বলেন, মুরসালিনকে আমরা সবাই  চিনি। সে খুবই চ ল প্রকৃতির ছেলে। গত বছর বিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়েও পুরো বছর জুড়ে ক্লাস করেছিলো। এ বছর আমরা তাকে শিশু শ্রেনিতে ভর্তি করে নেই। বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস করে এবং লেখাপড়ায় অনেক ভালো সে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, তাকে যেনো দ্রুতই খুঁজে বের করে। এ বিষয়ে সিআইডির তদন্তকারী  কর্মকর্তা পরিদর্শক মোঃ ইফতেখারুল আলম জানান, গত মাসের ১২ তারিখে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। আমাদের তদন্তের কাজ অব্যাহত রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি মামলাটি তথ্য উৎঘাটন সহ প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। এর আগে অভিযোগ পাওয়ার পর কাশিয়ানী থানা পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত আসামীদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয়। পরবর্তীতে মামলাটি অধিক তদন্তের জন্য সিআইডিতে স্থানান্তর করা হয়।