নাটোরে চাষ হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্লাক রাইস!

সালাহ উদ্দিন , নাটোর :

উপকৃত হবেন ক্যানসার, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ এবং ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের রোগী!

বলা হয়ে থাকে,মাছে-ভাতে বাঙালী। কেননা,বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য ভাত। আর এই ভাত তৈরী হয় চাল থেকে;যে চাল পাওয়া যায় ধানে। আমরা সাধারণত ক্ষুধা নিবারণের জন্যই ভাত খেয়ে থাকি;যদিও ভাতে থাকে দেহের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান। কিন্তু ভাত যদি হয় রোগপ্রতিরোধে সহায়ক,তাহলে নিশ্চয়ই তা হবে সকলের প্রত্যাশিত। কেননা,আমাদের আয়ের একটা বড় অংশ প্রতিনিয়ত ব্যায় হয় রোগের চিকিৎসায়। হ্যাঁ,তেমনি এক সুখবর পাওয়া গেছে কৃষি বিভাগ সূত্রে। আর তার নাম হল ব্ল্যাক রাইস। এই ব্ল্য্যাক রাইসের এখন চাষ হচ্ছে নাটোর জেলায়!

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে ,চীনে চতুর্দশ শতক থেকে সপ্তদশ শতকে মিং যুগে এই
ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধানের চাষ হতো। কিন্তু রাজা বা রাজপরিবার ছাড়া কারও এই কালো চালের ভাত খাওয়ার অধিকার ছিল না। প্রজাদের জন্য এই চাল নিষিদ্ধ ছিল বলে এই চালকে বলা হয় নিষিদ্ধ চাল বা ফরবিডেন রাইস। কালের বিবর্তনে জাপান ও মিয়ানমারে এই ধানের চাষ শুরু হয়। এরপর থাইল্যান্ডে শুরু হয় এর চাষাবাদ। সেখান থেকে এই ধানের চাষাবাদ শুরু হয় বাংলাদেশে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওই ধানের চাষাবাদ সীমাবদ্ধ ছিল পাহাড়ী অঞ্চলে। পার্বত্য এলাকায় এই চালকে বলা হয় পোড়া বিন্নি চাল। থাইল্যান্ডে একে বলে কাও নাইও ডাহম।

নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল ফারুক ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বলেন, সদর উপজেলার লক্ষিপুর-খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের গাজিপুর বিলে চাষ হয়েছে ওই ব্ল্যাক রাইসের। স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অর্গানিক পল্লী এগ্রো ফার্মস এন্ড নার্সারীর পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল কৃষি বিভাগের সহায়তায় ওই ধানের চাষ করেছেন।
সরেজমিনে গাজীপুর বিলে দেখা যায়, কৃষক ও উদ্যোক্তা টুটুল তার ১ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেছেন ওই ব্ল্যাক রাইস।
দেখা যায়,ওই ধানগাছ অন্যান্য ধানগাছের মতো হলেও ধানের শীষের কিছু ধানের রং কালো। তবে শীষের আকৃতি তুলনামূলক বড়।
জানতে চাইলে মোস্তাফিজুর রহমান টুটুল বলেন,তিনি ময়মনসিংহ থেকে ওই ধানের ১ কেজি বীজ সংগ্রহ করেছিলেন। সমস্ত খরচসহ তার ১ বিঘায় ব্যায় হয়েছে ১৩ হাজার টাকা।
ধানের খোসা সরিয়ে দেখা যায়,চালগুলোর রং কালো।
ফলন সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল ফারুক ও সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বলেন, জমির অতিরিক্ত রস থাকায়
ধানগাছগুলো আগেই পড়ে গিয়েছিল। ফলে কিছুটা চিটা হয়েছে। তবে তাদের পরীক্ষালব্ধ,ফলাফল অনুযায়ী ওই জমিতে প্রায় ১১-১২ মন ধান পাওয়া যাবে যা শুকানোর পর ১০ মনে টিকবে। গড়ে প্রতিমনে ২৫ কেজি চাল হলেও মোট ২৫০ কেজি চাল পাওয়া যাবে যার বাজারমূল্য্য সর্বনিম্ন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হিসেবে ৩৭৫০ থেকে ৫ হাজার টাকা। এতে স্বাভাবিক ধান করার চেয়ে লাভ অনেক বেশি। এ-র পাশাপাশি রয়েছে অনন্য্য পুষ্টিগুণ।
চালের রং বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদুল ইসলাম বলেন,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্লাভিনয়ের্ড বা এনথোসায়ানিন খুব বেশি পরিমাণে থাকায় এই চালের রঙ কালো হয়।

চালের পুষ্টিগুণ বিষয়ে জানতে চাইলে
নাটোর সদর উপজেলা-কৃষি অফিসার মোঃ মেহেদুল ইসলাম বলেন, কালো চাল ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মাহমুদুল ফারুক বলেন, কালো চাল সাধারণ চালের তুলনায় অনেক বেশি উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত। তুলনামূলক বিচারে অ্যানথোসায়ানিন, প্রোটিন ও ফাইবার অন্যসব চালের থেকে কালো চালে বেশি থাকে। চালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর থাকায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ত্বক পরিষ্কার করে ও শরীর হতে দূষিত পদার্থ বের করে শরীরকে ফুরফুরে রাখে।