নবজাতকের ৫ বিপদ চিহ্ন

নবজাতকের বিপদচিহ্ন বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই বিষয়টি আমি সবসময় বলতে পছন্দ করি। কারণ, একটা সুস্থ বাচ্চার চিহ্ন না জানার কারণে খুব বেশি ক্ষতি হয় না। কিন্তু বিপদচিহ্ন না জানলে বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাঈমা সুলতানা।

নবজাতকের ক্ষেত্রে তার প্রথম বিপদচিহ্ন হচ্ছে- সে যদি মায়ের দুধ টেনে খেতে না পারে। এটা হচ্ছে নবজাতকের প্রথম বিপদচিহ্ন। মানে হচ্ছে সে অসুস্থ হওয়া শুরু করেছে। যে বাচ্চা আগে বুকের দুধ টেনে খেতে পারতো, হঠাৎ করে সে যদি এখন না পারে সেক্ষেত্রে আপনারা আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

এক্ষেত্রে অভিভাবকেরা অনেক সময় যা করে থাকেন, সেটা হলো- বাচ্চা বুকের দুধ টেনে খেতে না পারলে, তারা দুধটাকে ঢেলে খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন দেখা যায় শ্বাসনালীতে দুধ চলে যায়। এতে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। এ রকম যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

একটা বাচ্চা যদি আগে থেকে মায়ের দুধ টেনে খেতে পারতো, কিন্তু চতুর্থ, পঞ্চম দিনে অথবা ১৫তম দিনে যদি আর মায়ের দুধ টেনে খেতে না পারে, সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

নবজাতকের আরেকটা বিপদ চিহ্ন হলো- বাচ্চা অতিরিক্ত হলুদ হয়ে যাওয়া। একটা বাচ্চা নরমাল বা সিজারে ডেলিভারি হওয়ার পর হাসপাতাল থেকে যখন বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন যদি দেখেন দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চার গায়ের রং মাথা থেকে শুরু করে নাভি পর্যন্ত হলুদ হয়ে গেছে, অথবা পায়ের মধ্যে হলুদ ভাব হয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে কোনোভাবে দেরি না করে নিকটস্থ শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

নবজাতকের আরেকটি বিপদচিহ্ন আমরা খেয়াল করে থাকি, তাদের সারা শরীরে পুঁজ জমে যায়। এখন এক্ষেত্রে দুই ধরনের পুঁজ রয়েছে। একটি হচ্ছে সাদা পুঁজ, আরেকটি হচ্ছে লাল লাল দানা। এক্ষেত্রে অনেক সময় মুরুব্বিরা বলে থাকেন যে, এগুলো এমনিতেই উঠে, আবার ঠিক হয়ে যায়।

এটা ঠিক যে, যেটা লালচে দানা শরীরে ওঠার কয়েকদিনের মধ্যেই আবার ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যেটা সাদা পুঁজ জমে যায়, সেটা মারাত্মক। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই দেরি করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নবজাতকের আরেকটি বিপদ চিহ্ন হলো- বাচ্চাটি খেলছে, হয়তো কোনো রকম মায়ের দুধ টেনে খেতে পারছে, কিন্তু তার কোনো অ্যাক্টিভিটি নেই, সে কাঁদছে না। সে লেথারজিক হয়ে পড়ে আছে। বাচ্চা তার স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণে কম খাচ্ছে, অথবা স্বাভাবিকের চেয়ে কম নড়াচড়া করছে বা একেবারেই নড়াচড়া করতে পারছে না। অথবা দেখা গেল তার হঠাৎ করেই তীব্র জ্বর।

আমরা বলে থাকি, একটা বাচ্চার জন্ম নেওয়ার দিন থেকে ২৮তম দিন পর্যন্ত সে হচ্ছে নবজাতক। এ সময় বাচ্চার অতিরিক্ত জ্বর বা স্বল্প জ্বর হতে পারে, যেটাকে আমরা বলে থাকি হাইপোথার্মিয়া। এই হাইপোথার্মিয়াও বাচ্চার জন্য খারাপ। এক্ষেত্রে দেখা যায় বাবুটা হঠাৎ করেই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, তখন দেরি না করে তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

নবজাতকের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, একটা নবজাতকের সবকিছুই ঠিক আছে, সুস্থ আছে; কিন্তু তার খিঁচুনি হচ্ছে। সেটা খিঁচুনি কিনা আপনি আবার সেটা নিশ্চিত হতেও পারছেন না। সেক্ষেত্রে আপনি একটি স্মার্টফোন দিয়ে বাচ্চার খিঁচুনির ভিডিও করে রাখতে পারেন। বাচ্চার হাত কিংবা পা একটু স্পর্শ করে দেখতে পারেন যে, তার খিঁচুনি কমছে কিনা। আর ভিডিও করে রাখলে আপনি যখন বাচ্চাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন, তখন সেই ভিডিও দেখে চিকিৎসকের বুঝতে সুবিধা হবে। তখন চিকিৎসক বুঝতে পারবেন যে এই খিঁচুনিটা কি কোনো মারাত্মক কোনো খিঁচুনি ছিল নাকি অন্য কোন সমস্যার কারণে হয়েছে। তাই বাচ্চার এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই ভিডিও করে নিতে হবে।

সূত্র: ডক্টর টিভি