নওগাঁয় সমিতি মালিকের ফাঁদে পা দিয়ে ২১ লাখ টাকা হারিয়ে দিশেহারা মা-ছেলে

নওগাঁয় সমিতি মালিকের ফাঁদে পা দিয়ে ২১ লাখ টাকা হারিয়ে দিশেহারা মা-ছেলে
এস.এ বিপ্লব, নওগাঁ প্রতিনিধি-
নওগাঁয় অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে মা ও ছেলের কাছ থেকে ৪১ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ‘স্বপ্নের আলো সঞ্চয় ও কৃষি পণ্য উৎপাদনমূখী সমবায় সমিতি লিঃ’ নামে এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান পলাতক রয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মোসাঃ ফিরোজা খানম ও তার ছেলে মোঃ ফিরোজ মোশারফ। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার মহাদেবপুর উপজেলা সদরে।
জানা যায়, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের সমিতির কার্যক্রম শুরু করে ‘স্বপ্নের আলো সঞ্চয় ও কৃষি পণ্য উৎপাদনমূখী সমবায় সমিতি লিঃ’। সে সময়ে ফিরোজা খানম কিছু টাকা সে সমিতিতে বিনিয়োগ করেন ভাল মুনাফার আশায়। কয়েক মাস বিনিয়োগের লভ্যাংশ ফিরোজা খানমকে প্রদান করে আস্থা অর্জন করেন সমিতির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান। পরবর্তীতে মিজানুর জানতে পারেন ফিরোজা খানম এর বেশ কিছু টাকা নগদ ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে গচ্ছিত আছে।মিজানুর রহমান নীরবে ছক টানেন কিভাবে টাকাগুলো হাতিয়ে নেওয়া যায়। এরপর উপজেলার পশু হাসপাতাল সংলগ্ন ভুক্তভোগী ফিরোজা খানম এর বাসার নীচ তলায় সমিতির অফিস হিসেবে ভাড়া নেন ‘স্বপ্নের আলো সঞ্চয় ও কৃষি পণ্য উৎপাদনমূখী সমবায় সমিতি লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান। অবশেষে ফিরোজা খানমকে মোঃ মিজানুর রহমান প্রলোভন দেখান যে, ব্যাংকে কিংবা পোস্ট অফিসে টাকা রাখার থেকে তার সমিতি প্রতিষ্ঠানে টাকা রাখায় বেশি মুনাফা। ফিরোজা খানম সহজেই তার কথাগুলো বিশ্বাস করে মুনাফার আশায় পরবর্তীতে আরও কয়েক দফায় সর্বমোট- ২১লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। একইভাবে ফিরোজা খানম এর ছেলে মোঃ ফিরোজ মোশারফ ২০ লাখ টাকা একই সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমানকে বিশ্বাস করে তার ফাঁদে পা দিয়ে বিনিয়োগ করেন। যার পরিপেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান ‘ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ মহাদেবপুর শাখায়’ করা ব্যাংক আকাউন্টের ৩ টি নিজ স্বাক্ষরিত চেক, ২০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে চুক্তিপত্র ও টাকা গ্রহণ ও মুনাফা প্রদানের জন্য সমিতির একটি ভিন্ন ভিন্ন পাস বই প্রদান করেন।
এরপর কিছুদিন মা-ছেলে মুনাফা গ্রহণ করতে থাকে। একইভাবে প্রলোভন দেখিয়ে পরবর্তীতে মোঃ আইসানূল হক এর থেকে ১০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা, মাহবুবা খানুম এর ২ লাখ ৭০ হাজার, তানজিমা আরা এর ১ লাখ, আরিফ হোসেন এর ১২ লাখ টাকা সহ আরও কয়েকজন গ্রাহকের থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের স্বাক্ষরিত ব্যাংক চেক ও পাস বই প্রদান করেন।পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ করে দেন মোঃ মিজানুর রহমান। বিপাকে পরে যান অর্থ বিনিয়োগ করা গ্রাহকেরা। ঘুড়তে থাকেন সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর দ্বার প্রান্তে। তাদের টাকা ফেরত নিতে সব ধরণের প্রক্রিয়া যখন ব্যর্থ তখন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ববিনিয়োগ করা মাহবুবা খানম ‘স্বপ্নের আলো সঞ্চয় ও কৃষি পণ্য উৎপাদনমূখী সমবায় সমিতি লিঃ’ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান এর নামে ১৮/১১/২১ ইং তারিখে নওগাঁ জুডিসিয়াল মাজিস্ট্রেট ৩নং আমলী আদালতে এক মামলা দায়ের করেন। যার চলমান মামলা নং- ৪৪৪ সি/২১ (মহাঃ)।
এদিকে ভুক্তভোগী মোসাঃ ফিরোজ খানম ও তার ছেলে ফিরোজ মোশারফ হয়ে পরেন দিশেহারা। বিভিন্ন বৈঠকের মাধ্যমে চেষ্টা করেন দুজনার সর্বমোট ৪১,০০,০০০ (৪১লাখ) টাকা ফেরত নিতে। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্ময়ে স্বপ্নের আলো সঞ্চয় ও কৃষি পণ্য উৎপাদনমূখী সমবায় সমিতি লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান এর থেকে প্রাপ্য টাকার সকল সঠিক কাগজপত্র ও প্রমান পেশ করেন তবে মিজানুর রহমান বার বারই টাকা ফেরত দিতে সময় চেয়ে নেন। অবশেষে দিশেহারা ভুক্তভোগী মা-ছেলে তাদের টাকা ফেরত পায়না, কেটে যায় মাস-বছর । তবে গত ৭ অক্টোবর ২১ইং তারিখে মোসাঃ ফিরোজা খানম এর আবেদনের পেক্ষিতে মোঃ মিজানুরকে নিয়ে মিমাংশার বৈঠক শেষে পরবর্তী ১০ অক্টোবর ২১ থেকে আর খোঁজ মেলেনা মোঃ মিজানুর রহমান এর।
এদিকে শেষ বয়সে নিজের উপার্জনের সর্বস্ব মিজানুর রহমানের হাতে তুলে দিয়ে সর্বশান্ত হয়ে দিন পাড়ি দিচ্ছে মোসাঃ ফিরোজা খানম।

এ বিষয়ে ফিরোজা খানম বলেন, আমি চাকুরি থেকে যা রোজগার করেছি তা দিয়ে শেষ বয়সে স্বাচ্ছন্দ্যে দিন কাঁটানোর জন্য বিশ্বাস করে মিজানুর রহমানকে সব টাকা তুলে দিয়েছি। কিন্তু সে টাকাটা ফেরত দিচ্ছেনা, লোক মুখে শোনা যাচ্ছে মিজানুর দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। আমি দিশেহারা হয়ে গেছি। আমি আমার শেষ সম্বল টাকা ফেরত এর পাশাপাশি বিচার দাবী করছি।
এ বিষয়ে স্বপ্নের আলো সঞ্চয় ও কৃষি পণ্য উৎপাদনমূখী সমবায় সমিতি লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারণে সম্ভব হয়নী।