ধূমপানমুক্ত রাজশাহী গড়তে সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা

রাজশাহী ব্যুরোঃ ধূমপানমুক্ত রাজশাহী নগরী গড়তে সাংবাদিকদের সহযোগীতা চাওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রিফাতুল ইসলাম ও বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) নির্বাহী পরিচালক সালিমা সারোয়ার বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সহায়তা কামনা করেন।

মহানগরীর একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এসিডি। রাজশাহী মহানগরীতে ‘তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা’ শীর্ষক পরিচালিত এসিডির এক জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে বলা হয়, রাজশাহী মহানগরীতে এখনও পাবলিক প্লেসে ধূমপান চলছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা তাদের লেখনির মাধ্যমে প্রশাসনকে সহযোগীতা করতে পারেন।

এসিডির জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ৯০ শতাংশ দোকানে তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আইন বহির্ভুত অবৈধ বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা ও পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। মহানগরীর ২ হাজার ৭৩৬ টি তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪২৪টিতে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে এ চিত্র দেখা গেছে।

এছাড়া ২ হাজার ৭৩৬টি তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৭১১টি (৬২ দশমিক ৫৩ শতাংশ) বিক্রয়কেন্দ্রের কোনো লাইসেন্স নেই। নির্বাচিত তামাকপণ্যের দোকানগুলোর মধ্যে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ পোস্টার, স্টিকার, সাইনবোর্ড বা ব্যানার রয়েছে ৪৯ দশমিক ৮০ শতাংশে, ডামি প্যাকেট অথবা খালি প্যাকেট ৫২ দশমিক ০১ শতাংশ; তামাকপণ্য বিক্রয়ের বক্স বা শোকেজ আছে ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ দোকানে; কোনো কাঠামোর ওপর ব্র্যান্ডের ছাপ দেয়া রয়েছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ দোকানে; ফ্লাইয়ার, লিফলেট বা পেমপ্লেট রয়েছে ২ শতাংশ ৪০ শতাংশ দোকানে।

এছাড়া বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তামাকপণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ দোকানে। সামগ্রিকভাবে মহানগরীতে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্রে আইন লঙ্ঘনের চিত্র দেখা গেছে- আইন বহির্ভুত পণ্য প্রদর্শণ ৭০ শতাংশ দোকানে; বিজ্ঞাপন বা প্রণোদনা ৭৭ শতাংশ দোকানে এবং ৯০ শতাংশ দোকানে বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা, পণ্য প্রদর্শণ করতে দেখা গেছে। দাতা সংস্থা ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স-সিটিএফকে’ এর সহযোগিতায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে জরিপটি চালিয়েছে এসিডি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রিফাতুল ইসলাম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে রাজশাহীতে মাঝেমধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। তামাক কোম্পানির অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে আরও বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। রাজশাহী শহরকে ধূমপানমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সাংবাদিকদের বেশি বেশি সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানান।

সভাপতির বক্তব্যে এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো তামাক আইন লঙ্ঘন করে মৃত্যুর বিপনন করছে। তামাক কোম্পানিগুলো যাতে রাজশাহীতে তাদের অবৈধ বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

এসিডির মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুলের পরিচালনায় সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ‘এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক শরীফ সুমন ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ। অন্যদের মধ্যে আরও ছিলেন এসিডির ডিরেক্টর (ফিন্যান্স) পংকজ কর্মকার, প্রোগ্রাম অফিসার কৃষ্ণা রাণী বিশ্বাস, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে জরিপের প্রতিবেদন পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করেন ‘এসিডি’র অ্যাডভোকেসি অফিসার শরিফুল ইসলাম শামীম।