দখলবাজির রাজনীতিতে আব্দুর রাজ্জাকরা অসহায়

ওমর আলী সোহাগ, ঝিনাইদহ

আব্দুর রাজ্জাক (৭২)। গায়ে বল নেই, টাকা নেই। ৫ মেয়ে ও ১ ছেলে। নিজের কৃষি জমি না থাকায় পরের জমিতে জন-বর্গা দিয়ে সংসার চলে তাদের। ১৯৭৯ সাল থেকে এক নাগাড়ে ২৫ বছরের বেশি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এখন পদ-পদবী নেই। ৫ বছর আগে বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড পেয়েছেন। তবে দলীয় নেতাদের সাময়িক আর্থিক সহযোগিতাও যে পাননি এমন নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের চরম দুঃসময়ে যারা ছিলেন আওয়ামী লীগের চরম বিদ্যেষি আজ তাদের হাতেই আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব। আর আব্দুর রাজ্জাকরা তাদের চেয়ার এগিয়ে দেওয়া, চা-পান নিয়ে যেয়ে দিয়ে ৫০-১০০ টাকা পকেটে নিয়েই সন্তুষ্ট।

এমন চিত্র ঝিনাইদহের প্রতিটা ইউনিয়নে। খোঁজ করলে জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ও ৬ পৌরসভায় অসংখ্য আব্দুর রাজ্জাককে খুঁজে পাওয়া যাবে।

প্রতিবছর জেলায় ৫০ জনের অধিক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন, পাচ্ছেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহযোগিতা। কিন্তু সদর উপজেলার হলিধানি ইউনিয়নের সোনারদাইড় গ্রামের মৃত জবেদ আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের ভাগ্যে কোনটায় জোটেনি।

১৫ শতক জমি আছে ভিটাবাড়ির। ৫ মেয়ের বিয়ে হয়েছে। জন-বর্গায় দেওয়ায় এখন তাদের ভরসা। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী যখন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন তখন থেকেই তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি ছিলেন চায়ের দোকানদার আব্দুল গনি। তিনি গত হয়েছেন। আব্দুল গনি ও আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ করার কারণে এই অঞ্চলে আওয়ামী বিরোধী পক্ষ রশীদ রাজাকারের বাহিনীর হাতে অসংখ্যবার লাঞ্ছিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন।

আজও নৌকা ও আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে দেখা যায় রাজ্জাককে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি তৈয়ব আলী জোয়ার্দার বলেন, রাজ্জাক ভাই, আব্দুল গনি ভাই বড় দুঃসময়ে হলিধানী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। আমি তখন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তখন আওয়ামী লীগ করার লোক খুঁজে পাওয়া যেত না।

তৈয়ব জোয়ার্দ্দার আরো বলেন, হলিধানী ইউনিয়ন স্বাধীনতা বিরোধীদের ঘাঁটি ছিল। সেই ঘাঁটির মধ্যে থেকে আওয়ামী লীগ করা সহজ ছিলনা। কিন্তু আজকে আওয়ামী লীগের সুদিনেও তারা বঞ্ছিত।

আব্দুর রাজ্জাক জানান, ৭৫ পরবর্তী সময়ে যাদের নির্যাতনে আমরা অতিষ্ট ছিলাম আজ তারাই ইউনিয়নের সব। আমাদের জীবনের কোন গতি হলো না। নেত্রীর কাছে আবেদন আমাদের মত কর্মীদের যেন তিনি খোঁজ নেন। স্থানীয় কাছে আমরা অসহায়। বিভিন্ন দল বদল করাদের দখলেই সব।